বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের নির্মমতা চারিদিকে বিদ্যমান। জাতির ক্রান্তিকালে সকল সঙ্কটে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়। জাতীয় জীবনের চলমান সঙ্কটে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুন:প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী আগামীকাল ৩০ মে। এ উপলক্ষে শহীদ জিয়ার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও মাগফিরাত কামনা করে শুক্রবার গণমাধ্যমে বাণী দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
তিনি বাণীতে বলেন, বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে বর্তমান সরকার। সেজন্য গণতন্ত্রের আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এখন তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তার মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-শহীদ জিয়ার প্রবর্তিত কালজয়ী দর্শন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ও তার অবিনাশী আদর্শ এদেশের মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সুরক্ষার এবং উৎপাদন ও অগ্রগতি তরান্বিত করার। জাতির ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়। তিনি সকল সংকটে দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে তাঁর অনবদ্য অবদানের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহুর্তে ২৬শে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করেছে। এই ঘোষণায় দেশের তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ মরণপণ যুদ্ধে সামিল হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে জাতি বিদেশী শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে বিজয় অর্জনের অব্যবহিত পরে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর দুর্বিনীত দুঃশাসনে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা ও কাঙ্খিত গণতন্ত্র মাটিচাপা পড়ে। একের পর এক দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা হরণ করা হয়, দেশ একদলীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসনের নিষ্ঠূর কবলে পড়ে পিষ্ট হতে থাকে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়। সেই সময় দেশের সর্বত্র বিভৎস অরাজকতা নেমে আসে। গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে দেশের সিপাহী-জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন। উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে খাদ্য রপ্তানীকারক দেশে পরিণত করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারিরা কখনোই মেনে নিতে পারেনি। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোনো ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে অবস্থান করেন।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী চলছে অজ্ঞাত দানব করোনা মহামারির তান্ডব। ইতোমধ্যে তিন লক্ষাধিক মানুষ এই রোগে মৃত্যুবরণ করেছে, আর আক্রান্ত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। এখন গভীর আতঙ্ক ও উৎকন্ঠার মধ্যে রচিত হচ্ছে দিনযাপনের মানবিক কাহিনী। আমাদের সকলকে এ সম্পর্কে সচেতন থেকে করোনার হাত থেকে বাঁচতে আজ শহীদ জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে পানাহ চাই।
তিনি বলেন, রণাঙ্গনের অনন্য মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভীক, নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমনের পটভূমিতে তার অম্লান স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি আমি উদ্বাত্ত আহবান জানাচ্ছি। নয়া দিগন্ত