পতাকা ডেস্ক: দেশকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়া আওয়ামী অপশক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে জনগণকে আগামীকাল ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি’।
ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ ও প্রহসনমূলক নির্বাচন বর্জনে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি এবং ৭ জানুয়ারি কে ইতিহাসের কালোদিন হিসেবে চিহ্নিত করে পুরোদিন ‘স্বেচ্ছায় প্রতিবাদী লকডাউন’ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। আজ বিজয় নগরস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিজয় নগরস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক প্রফেসর ডাঃ মেজর (অবঃ) আব্দুল ওহাব মিনার।
সংবাদ সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, গতকাল ট্রেন পুড়িয়ে মানুষ হত্যার যে নৃশংসতা করা হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। হতাহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে চুড়ান্তভাবে দাফন করার আয়োজন চলছে। এই নির্বাচন জনগণের কোন নির্বাচন নয়। এটি আওয়ামীলীগ, ডামি আওয়ামী লীগ, সরকারের পদলেহনকারী প্রশাসন ও সংস্থা সমুহের যৌথ নির্বাচন। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দেখছেন একজন প্রার্থী নিজে ঘোষণা করেছেন তিনি ভারতের প্রার্থী তারপরও নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এটা কতবড় তামাশা! আমরা এই নির্বাচন ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করি। যতদিন জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হবে এবি পার্টি আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
লিখিত বক্তব্যে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এই সরকার দেশের জনগণের অধিকার, বাক্ স্বাধীনতা ও স্বাধীন মতামতের মাধ্যমে সরকার গঠনের ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পরম্পরায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মত করে আগামীকাল আরেকটি সাজানো নাটক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে যার নাম ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। একজনের একক সিদ্ধান্তে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের লুটপাট অব্যাহত রাখার লাইসেন্স নবায়নের এই নির্বাচনকে দেশের জনগণ ঘৃনা ভরে প্রত্যাখান করেছে। আমরা জনগণকে অনুরোধ করছি এই প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করুন। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন শুরু থেকেই আমাদের পুরো আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, অহিংস এবং নিয়মতান্ত্রিক। কিন্তু সরকার পদে পদে বাঁধা দিয়ে সন্ত্রাসী ও পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে। পুলিশী অনুমতির নামে সমাবেশ করতে না দেয়া, রাস্তায় রাস্তায় তল্লাশী,বাস,ট্রেন,লঞ্চ, স্টিমার বন্ধ করে দিয়ে বিরোধীদের সমাবেশে জনসমাগম ঠেকানো, বিরোধীদলের কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি ডাকা। হামলা, গুম, খুন গায়েবী মামলা ইত্যাদি হেন কোন কাজ নেই যা সরকারী দল করেনি। সবশেষ তারা নিজেরা নানা নাশকতা করে বিরোধী রাজনৈতিকদল গুলোকে দায়ী করার চেষ্টা করছে।
গত ২৮ অক্টোবর -এ লক্ষ লক্ষ মানুষের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ পন্ড করতে আওয়ামী পুলিশ কর্তৃক হাজার হাজার রাউন্ড গুলি, টিয়ারশেল ও গ্রেনেড চার্জের ঘটনাকে ২০১৩ সালের ৫ মে এবং ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর ভয়াল নৃশংসতার সাথে তুলনা করে মঞ্জু বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি ও আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোর উপর সরকার মর্মন্তুদ নির্যাতনের ভয়াবহ স্টিম রোলার চালিয়ে আসছে। পাশাপাশি সরকার পর্দার অন্তরালে লোভ প্রলোভন, ভয়-ভীতির মাধ্যমে দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র করেছে। এক রাতে সবাইকে মুক্তি দেয়ার আশ্বাস, নির্বাচনে গেলে শত শত হাজার কোটি টাকা এবং সিট প্রদানের অফার। হানি ট্র্যাপ, মানি ট্র্যাপ করে নানা ভাবে ফাঁদ পাতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, কিন্তু তাদের কোন অপপ্রয়াসই সফল হয়নি। কতিপয় উচ্ছিষ্ট ভোগী রাজনীতিবিদ নামধারী দুরাচার ছাড়া কেউ সেই ফাঁদে পা দেয়নি।
মজিবুর রহমান মঞ্জু আরও বলেন পুলিশ ও আওয়ামীলীগের এতসব তান্ডব এবং মানুষকে জোর করে ভয় ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা সত্বেও আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশী লোক ভোট কেন্দ্রে যাবেনা। তিনি বলেন, আমরা দৃপ্ত কন্ঠে বলতে চাই, শোষিত মজলুমের বিজয় ও অপশাসনের করুণ পরিণতি ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে অচিরেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক বিএম নাজমুল হক, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুবপার্টির আহবায়ক এবিএম খালিদ হাসান, সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব আব্দুল বাসেত মারজান, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্যসচিব শাহ আব্দুর রহমান, এম আমজাদ খান, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্যসচিব কেফায়েত হোসেন তানভীর, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম নুর, যুবপার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, উত্তরের সদস্যসচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, গাজীপুরের সদস্যসচিব রাজিয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমানুল্লাহ খান রাসেল, মশিউর রহমান মিলু, রিপন মাহমুদ, পল্টন থানা আহবায়ক আব্দুল কাদের মুন্সি।