sliderমতামতশিরোনাম

দেবী আসবেন ঘোড়ায় চেপে যাবেন-ও তাই !

শাহীন রাজা : দেবী এবার ঘোড়ায় চড়ে আসবেন। যাবেন-ও ঘোড়ায় চেপে !
হিন্দু শাস্ত্র মতে, ঘোটকের (ঘোড়া) অর্থ ছত্রভঙ্গ। ঘোটক বা ঘোড়ার অর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির এলোমেলো অবস্থা। যুদ্ধ- বিগ্রহ, অশান্তি, বিপ্লব এইসবের আগাম সংকেত।
লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, বছর দেবীর আগমন ও গমন দুটোই ঘড়ায় চড়ে । যা ইঙ্গিত দেয় তা খুব একটা শুভ ইঙ্গিত নয়।
শাস্ত্রমতে বলা হয় সপ্তমীতে দেবী দুর্গার আগমন এবং দশমিতে গমন হয়। সাধারণত প্রতি বছর সপ্তমী ও দশমী কী বার পড়ছে তার ওপর নির্ভর করে দেবীর কিসে আগমন এবং গমন সেটা বোঝা যায়। শাস্ত্রে আরও বলা আছে, কোনও বছর দেবীর আগমন ও গমন একই বাহনে হলে তা অত্যন্ত অশুভ।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী মনে করা হয়, দেবীর দুর্গার মর্তে আগমন ও গমন যে বাহনে, তার ওপর নির্ভর করে গোটা বছরটা পৃথিবীবাসীর কেমন কাটবে।
২০২২ সালে দেবীর আগমন হয়েছিল গজে এবং গমন হয়েছিল নৌকায়।

দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসার প্রস্তুতি নিতে না নিতেই, ইসরায়েল – প্যালেস্টাইন ভয়াবহ যুদ্ধ বেঁধে গেছে। প্রথম দুইদিনের যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আহতের সংখ্যা অনেক বেশী। এই যুদ্ধে বৃদ্ধ থেকে শিশু কেউ বাদ যায়নি। যুদ্ধের শুরু দেখে মনে হচ্ছে, এ যুদ্ধ দীর্ঘ এবং বিস্তৃত হবে।
নাইন / ইলেভেন পরবর্তী পৃথিবীতে ধর্ম এবং জাতিগত বিভাজন দেখা দেয়। গত দুই দশক সময়ে এই বিভাজন অনেকটাই ধুসর হয়ে এসেছিল। গত শনিবার ( ৭ অক্টোবর) আবার তার পুনরুত্থান ঘটে। অল্প কিছুদিনের হয়তো মধ্যেই নাইন / ইলেভেন পরবর্তী চিত্র দেখা যাবে।

এই যুদ্ধ দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। ইরানের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় হামাস, ইসরায়েল আক্রমণ করে। ইরানের প্রত্যক্ষ মদত থাকলেও, রাশিয়া এর বাইরে নয়। কেননা ইউক্রেন, রাশিয়া যুদ্ধে একমাত্র ইরান প্রত্যক্ষভাবে রাশিয়ার পাশে অবস্থান নিয়েছে। যুদ্ধে, রাশিয়াকে সামরিক সরঞ্জামের সহযোগিতা করেছে। এবং ইরানের উপর বাইরের স্যাংসন থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার প্রত্যক্ষ মদতে ব্রিকসের সদস্য করা হয়েছে।
এই যুদ্ধে ব্রিকস সদস্যভুক্ত অন্যান্য দেশের প্রত্যক্ষ সমর্থন না থাকলে-ও একটা মৌন সমর্থন থাকবে। কেননা ব্রিকস জোটের প্রধান উদ্দেশ্যেই হচ্ছে আর্থিক এবং বানিজ্যিকভাবে আমেরিকা ও তার মিত্র পশ্চিম ইউরোপকে দুর্বল করে দেয়া।

ইরানে ধর্মীয় বিপ্লবের পর থেকেই আমেরিকার সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। এই সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি। এছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে একটার পর একটা নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ঐ দেশের অর্থনীতি ক্রমশই দূর্বল হয়ে আসে। তা-ই তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রশমনে প্যালেস্টাইনী যোদ্ধা গ্রুপ হামাসকে ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে-ও ধর্ম এবং শিয়া মতাদর্শ কাজ করেছে। ইরান এবং হামাস যোদ্ধারা উভয়ই শিয়া মতাদর্শের। এবং উভয়ের কাছেই ইসরায়েল এবং আমেরিকা শত্রু।

এদিকে বছরের উপর হয়ে আসছে রাশিয়া, ইউক্রেন সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। ইউক্রেন, রাশিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতি থমকে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে-ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। যে কোন সময় আভ্যন্তরীণ বড় ক্ষোভ দেখা দিতে পারে। যা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য সুখকর হবে না।রাশিয়া এইসকল বিবেচনায়, ইরানের মাধ্যমে আমেরিকাকে বেকায়দায় ফেলে দেয়া। তারা জানে, ইসরায়েলকে ধরা মানেই আমেরিকাকে বিশ্ব রাজনীতিতে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়া। তবে কতটুকু সফল হবে তা ভবিষ্যত অবস্থা না দেখে বলা যাবে না। বা আগাম বলার সময় হয়নি।

লেখক সিনিয়র সাংবাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button