sliderজাতীয়শিরোনাম

দুর্ঘটনা এড়াতে টিআইবির ১০ দফা সুপারিশ

পুরনো ঢাকার নিমতলী ও চুড়িহাট্টার মত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরও এধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা নিজেরাই প্রতিপালন করছে না। পাশাপাশি সরকার পুরনো ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম কেনো সরানো হবে না মর্মে আদালতের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দীর্ঘ ১০ বছরেও প্রদান না করায় প্রকারান্তরে আদালত অবমাননা করা হয়েছে।
নিমতলী, চুড়িহাট্টা এবং অতঃপর: পুরনো ঢাকার অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আজ এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা হ্রাস করে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা- নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. মোস্তফা কামাল। গবেষণা দলের অপর সদস্য ছিলেন একই বিভাগের সাবেক সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই গবেষণায় পুরনো ঢাকায় অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় পুরনো ঢাকার অগ্নিকা- প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের নির্দিষ্ট দায়িত্ব, সক্ষমতা ও কার্যক্রম; বিভিন্ন অগ্নিকা-ের পর গঠিত তদন্ত কমিটি ও আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, শিল্প মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ঢাকা জেলা প্রশাসন, কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা, সমন্বয়, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, অংশগ্রহণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। পুরনো ঢাকার আটটি থানার মধ্যে অগ্নি ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাগুলো এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায় ঢাকা মহানগরীতে ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে ছোট-বড় মিলিয়ে যথাক্রমে ২৩৯৭টি, ১৯৭৭টি এবং ২৯৫৩টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। পুরনো ঢাকায় এ প্রবণতা আরও বেশি। ২০১৮ সালেই পুরনো ঢাকার লালবাগ, হাজারীবাগ, সদরঘাট ও সিদ্দিকবাজার এলাকায় অন্তত ৪৬৮টি অগ্নিকা- ঘটে। প্রতিটি অগ্নিকা-ের পর তদন্ত কমিটি, টাস্কফোর্স গঠন ও গঠিত কমিটি বা টাস্কফোর্সের সুপারিশ প্রদান করা হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন ও নির্দেশনা পালনে ঘাটতি দেখা যায়। বিশেষ করে নিমতলী ট্রাজেডির পর তদন্ত কমিটি কর্তৃক ১৭ দফা সুপারিশ পেশ এবং উচ্চ আদালত কর্তৃক আদেশ জারির পরও সেসব সুপারিশ ও নির্দেশনা পালনে ব্যাপক অনীহা ও ব্যত্যয় দেখা যায়। এর ফলাফল হিসেবে ২০১৯ সালে পুনরায় চুড়িহাট্টায় অগ্নিকা-ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে হতাহতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পুরনো ঢাকায় দাহ্য রাসায়নিক পদার্থের প্রায় ১৫ হাজার গুদামের উপস্থিতি আছে। চুড়িহাট্টা অগ্নিকা-ের পর এসব রাসায়নিকের গুদাম/কারখানা অপসারণের জন্য ২০১৯ সালে শ্যামপুর, টঙ্গী এবং মুন্সীগঞ্জে স্থান নির্ধারণ করা হয়। শ্যামপুরে কাজ চলমান থাকলেও এখনও পর্যন্ত এসব গুদাম অপসারণের লক্ষণীয় উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
যেমন, ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক পুরনো ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মার্কেট, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ইত্যাদির পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাধার চিহ্নিতকরণ; ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি; বিস্ফোরক অধিদপ্তর কর্তৃক দাহ্য রাসায়নিক পদার্থের তালিকা প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া; কলকারখানা অধিদপ্তরকর্তৃক স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ৪,০০৯টি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা চিহ্নিতকরণ এবং এর মধ্যে ৬০০টির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের; সংশ্লিষ্ট অংশীজন কর্তৃক দাহ্য রাসায়নিকের গুদাম বা কারখানা স্থাপনের জন্য লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রাখা; চুড়িহাট্টা অগ্নিকা-ের পর টাস্কফোর্স কর্তৃক পুরনো ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ১০০টির অধিক কারখানা বন্ধ করা ইত্যাদি। যদিও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতায় এসব ইতিবাচক পদক্ষেপের সুফল প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত হয় নি।
গবেষণার দেখা যায়, অগ্নিকান্ডের মত দুর্যোগ মোকাবেলায় নানা আইনি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমনÑ ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ এবং ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৮; এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০২ এবং বিধিমালা, ২০০৪; শ্রম আইন, ২০০৬; বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ইত্যাদি প্রতিটি আইনেই নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং সুপারিশ বাস্তবায়নে অংশীজনদের সক্ষমতার ঘাটতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়।
যেমন, জাতীয় পর্যায়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি; ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক সকল কমিউনিটি সেন্টারে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়নি; চুড়িহাট্টা অগ্নিকা-ের পর একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি; গুরুত্ব না দেওয়া ও পরিকল্পনাহীনতার কারণে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক স্বতন্ত্র ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়নি; পুরনো ঢাকায় কোন রাসায়নিক পদার্থ কী পরিমাণে আছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের কাছে কোনো ডাটাবেজ নেই; লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া দাহ্য রাসায়নিকের ব্যবসা, গুদাম, কারখানার বিরুদ্ধে নিয়মিত ও পরিকল্পিত তদারকি করা যায় না।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ও পরবর্তী নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ক্ষেত্রে নানা ধরণের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি বিদ্যমান। যেমন, নানা সময়ে অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা পরিবার প্রায় একই ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও বিভিন্ন পরিবারসমূহকে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ বা ধরনের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। এর বিপরীতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহকে একই পরিমাণ বা ধরনের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে কোনো ক্ষতিপূরণই দেয়া হয়নি।
তদন্ত কমিটির ১৭টি সুপারিশের মধ্যে আটটি আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে এবং নয়টি সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। আর টাস্কফোর্সের চারটি সুপারিশের মধ্যে একটি আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে আর তিনটি সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া তদারকি, নজরদারি এবং অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তিতেও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এই বিষয়ে জবাবদিহির কোনো দৃষ্টান্ত নেই। অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্যের উন্মুক্ততাও ঘাটতি রয়েছে।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ট্রেড লাইসেন্সসহ কারখানা ও রাসায়নিক গুদাম স্থাপনের জন্য প্রযোজ্য লাইসেন্স প্রদান বা নবায়ন বন্ধ থাকলেও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে এবং রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে লাইসেন্স বের করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের অসাধু কর্মকর্তাদের পরামর্শে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে রাসায়নিক শব্দটি বাদ দিয়ে এন্টারপ্রাইজ হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স বের করে নিচ্ছে। লাইসেন্স বের করা কঠিন হয়ে পড়লে রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব ব্যবহার করা হয়। আবার রাসায়নিক ব্যবসার সাথে যুক্ত না হয়েও কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা নিজেদের নামে লাইসেন্স করে তা ব্যবসায়ীদের প্রদান করে থাকে। দাহ্য পদার্থ পরিবহন করে গুদাম পর্যন্ত নেওয়া হয় অনেকটা প্রকাশ্যেই।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেক করে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য টহল পুলিশ বা চেকপোষ্টগুলো গাড়িপ্রতি তিনশ টাকা করে চাঁদা নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো প্রতি মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা করে ঘুষ দিয়ে থাকে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া স্থানীয় এমপি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় এখানে অবৈধভাবে গোডাউন ভাড়া, দাহ্য পদার্থ পরিবহন ও সংরক্ষণ এবং নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটে থাকে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নিমতলী ও চুড়িহাট্টার ঘটনাকে বিক্ষিপ্ত ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। শুধু পুরনো ঢাকা নয়, সমগ্র ঢাকাবাসীর জন্য এটি যেমন একটি ভয়াবহ ট্র্যাজেডি তেমনি পুরো দেশবাসীর জন্য এটি সুশাসনের ঘাটতির একটি প্রকট দৃষ্টান্ত। এধরনের দুর্ঘটনা রোধে দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সমস্ত কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা রয়েছে। পরিস্কারভাবেই তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবগুলো প্রতিষ্ঠানেই বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে এবং হচ্ছে।’
তিনি বলেন, এধরনের দুর্ঘটনার পর নানা সুপারিশ ও নির্দেশনা প্রদান করা হলেও তা অবলীলায় অমান্য করা হয়েছে কিংবা সিংহভাগই বাস্তবায়িত হয়নি। এর ফলেই নিমতলীর পর চুড়িহাট্টার মত দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং এরপরও আরো দুর্ঘটনা ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এক্ষেত্রে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অবলীলায় সরকারী নির্দেশনাই অমান্য করে চলেছে। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মেনে আদালত অবমাননার মত ঘটনাও ঘটেছে; যা দায়িত্বহীনতা, সুশাসনের ঘাটতি ও অনৈতিকতার প্রকট দৃষ্টান্ত।
পুরনো ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী আঁতাতে বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চর্চা চলছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, ‘এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার পরিস্কার ঘাটতি রয়েছে এবং একে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশের পোয়াবারো অবস্থা তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মাঝেই তল্লাশির নামে জিম্মি করে অবৈধ অর্থ আদায়ের একধরণের ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের জন্যও দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
কঠোরভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা প্রকাশ করে ড. জামান বলেন, দুর্নীতি অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং সমাজে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করলেও মানুষের প্রাণহানির কারণও হতে পারে ইতোপূর্বে তা রানা প্লাজাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় দেখা গেছে। নিমতলী ও চুড়িহাট্টার ঘটনায় আবারো এটি প্রমাণিত হয়েছে। তাই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে এই ধরণের দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।
গবেষণায় প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত দুর্ঘটনা এড়াতে ১০ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- যেকোনো দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে রাসায়নিক বিপর্যয় রোধে জাতীয়ভাবে একটি রাসায়নিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং রাসায়নিক নিরাপত্তা বিষয়ে নির্দেশিকা তৈরি ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে; এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের অগ্নিকা-ের ঝুঁকি সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে; ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ কারখানা চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করতে হবে অথবা অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে স্বল্পমেয়াদী সময় দিয়ে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে; পুরান ঢাকার অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ ও জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
পর্যাপ্ত সংখ্যক ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করতে হবে; রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক ও স্বচ্ছ করতে হবে; আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজউক, কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা আইনে নিশ্চিত করতে হবে; ইত্যাদি। -বিজ্ঞপ্তি

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button