দ্বিতীয় ওয়ান ডে প্রায় জিতেই গিয়েছিল ভারত। শুধু ২ রানের অপেক্ষা। এখনই হয়ে যাবে। তাই ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে গোটা ভারতীয় দল। গ্যালারিতেও ভারতের পতাকা উড়ছে পতপত করে। আর মাত্র দুটি রান হলেই শুরু হবে উৎসব। তখনই ছন্দপতন। ১৯তম ওভার শেষ হতেই খেলা থামিয়ে দিলেন আম্পায়ার। পিচের কাছে তখন এসে জুটেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্লেয়াররা। হাজির বিরাট কোহালি ও শিখর ধবনও।
কী চলছে, টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে বোঝা মুশকিলই হচ্ছিল। ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রীর মুখে ক্যামেরা জুম হতেই বোঝা গেল তিনিও অবাক। ফেরার পথ ধরল দুই দলই। প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারের কাঁধে হাত রেখে হেসে ফেলতে দেখা গেল বিরাট কোহালিকেও। আর মাত্র দু’রান করলেই জিতে যাবে ভারত। হাতে রয়েছে ৩ ১ ওভার আর ৯ উইকেট। এক ওভারও হয়তো পুরো লাগত না। হয়তো দুটি বলেই শেষ হয়ে যেত খেলা। কিন্তু এখন এই দু’রান করতে অপেক্ষা করতে হবে ৪৫ মিনিট।
স্তম্ভিত সবাই। প্রাক্তন আম্পায়ার প্রসেনজিৎ ব্যানার্জি বলেন, ‘‘আম্পায়ার এই সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। যেহেতু ম্যাচটা একদমই শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল সেখানে আম্পায়ার দুই দলের অধিনায়কের মত নিয়ে আরো একটা ওভার খেলিয়ে দিতেই পারত। স্বাভাবিকভাবে এই ম্যাচটা শেষ করেই মাঠ ছাড়া উচিত ছিল। এখন যদি বৃষ্টি চলে আসে তা হলে তো ম্যাচটাই ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে।’’
ম্যাচ শেষে ক্ষোভ শোনা গেল সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জরেকরের গলায়। তিনি স্পষ্ট প্রশ্ন তুললেন, লাঞ্চ ব্রেক দিতে হলে কেন নির্দিষ্ট সময়ে নয়? মাঞ্জরেকর বলেন, ‘‘৫০ ওভারের নির্দিষ্ট সময়ে যদি নিয়ম মেনে লাঞ্চ ব্রেক দিতে হতো তা হলে আরো ১৫ মিনিট আগে দিতে হত। সেটা না দিয়ে কেন ১৯ ওভারে এসে এই ৪৫ মিনিটের লাঞ্চ ব্রেক। চূড়ান্ত খারাপ সিদ্ধান্ত।’’ শুধু খারাপ সিদ্ধান্ত নয়, অস্বাভাবিক সিদ্ধান্তও বটে। সঞ্জয় মাঞ্জরেকর প্রশ্ন তুললেন, খেলা শুরু আগে বৃষ্টি এসে যদি ম্যাচ ভণ্ডুল যায় তা হলে কে দায়ী থাকবে।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৯ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত
স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগ্রাসী এক জয় পেয়েছে সফরকারী ভারত। রোববার সেঞ্চুরিয়ানের সুপার স্পোর্ট পার্কে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রোটিয়াদের ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারায় ভারত। এ জয়ের ফলে ছয় ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল এশিয়ার এই ক্রিকেট পরাশক্তি।
টস জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে মাত্র ১১৮ রানেই অল আউট করে দেয় ভারত। চাহাল ২২ রানে ৫টি এবং কুলদীপ যাদব ২০ রানে ৩ উইকেট লাভ করেন। ম্যাচটি মাত্র ৩২.২ ওভারে শেষ হয়ে যাওয়ায় ম্যাচের প্রথমার্ধ্বেই শুরু হয় ভারতীয় ইনিংস।
বোলারদের পর সেখানে ব্যাটিং তান্ডবে মেতে ওঠে ভারতীয়রা। শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলির আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের তান্ডবে ভারত যখন এক উইকেট হারিয়ে ১১৭ রানে পৌঁছায় তখনই লাঞ্চ বিরতির নির্ধারিত সময় এসে যায়। যে কারণে বাধ্য হয়ে বিরতির নির্দেশ জারি করে কর্তব্যরত দুই আম্পায়ার আলীম দার ও আদ্রিয়ান হল্ড স্টোক।
এর আগে ভারত যখন ৯৩ রানে তখনই মুলত প্রথমার্ধ্বের ১৫ ওভারের কোটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবে খেলার অবস্থা বিবেচনা করে নির্ধারিত বিরতিতে না গিয়ে আরো চার ওভার বাড়িয়ে দিয়েছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আম্পায়ারদ্বয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। লাঞ্চ বিরতির পর ঠিকই মাঠে নামতে হয়েছে খেলোয়াড় ও আম্পায়ারদের। এ সময় মাত্র ৪০ মিনিটের বিরতির নিদের্শনা জারি করা হয়। ইতোমধ্যে অবশ্য দর্শক শূন্য হয়ে পড়ে গোটা স্টেডিয়াম।
বিরতির পর জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের খেলতে হয়েছে আর মাত্র ৯ বল। শেষ পর্যন্ত ২০.৩ ওভারে ১১৯ রান সংগ্রহের মাধ্যমে জয়ের লক্ষ্য পূরণ করে ভারত। তাদের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ধাওয়ান ও কোহলি সংগ্রহ করেছেন যথাক্রমে ৫১ ও ৪৬ রান। এর আগে রাবাদার বলে মরকেলের হাতে ধরা পড়ে সাজঘরে ফিরেন ১৫ রান সংগ্রহকারী ওপেনার রোহিত শর্মা।
সিরিজের পরবর্তী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি কেপ টাউনে।