
হামলা চালাতে গিয়ে পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিরোধের মুখে পড়ে দুটি মিগ-২১ বিমান হারিয়েছে ভারত। ওয়েবসাইটে যে সব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে জানা যাচ্ছে, ভারতের মোটামুটি ৩৫০ কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে শুধু এ দুটি বিমান হারানোর মধ্য দিয়েই। বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিমাণটি দাঁড়ায় ৪২০ কোটি টাকার কিছু বেশি।
কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ১৪ ফেব্রুয়ারি এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয়েছে সিআরপিএফ বাহিনীর ৪৪ সদস্য। ভারত সে ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তান ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে শান্তির প্রস্তাব দেয়। তবে এ সতর্কতাও জানায়, ভারতের পক্ষ থেকে হামলা হলে তারাও এ সমুচিত জবাব দেবে।
পুলওয়ামার ঘটনার ১২ দিন পর গত মঙ্গলবার ভারত এলওসি অতিক্রম করে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে গিয়ে হামলা চালায়। ভারত দাবি করে তাদের এ অভিযানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কয়েকটি ঘাঁটি বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়েছে। এতে ৩০০-৩৫০ লোক নিহত হয়েছে। পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ করলেও তাদের এ ধরনের হামলা বা হতাহতের কথা অস্বীকার করে। কিন্তু তারা এ-ও জানায়, আত্মরক্ষার অধিকার তাদের আছে। সুতরাং সময় হলেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ভারতের এ অভিযানের পরের দিন পাকিস্তান ভারতের ভূখ-ে গিয়ে একটি সেনা ছাউনির কাছে গিয়ে বোমা বর্ষণ করে আসে। পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান আবার পাকিস্তানে ঢুকে পড়ে। পাকিস্তান এবার ভারতের দুটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি জানিয়ে বলে, তারা এ ঘটনায় একজন পাইলটকেও আটক করেছে। ভারত প্রথমে পাকিস্তানের এ দাবি অস্বীকার করলেও ওই পাইলটের ছবি ও ভিডিও প্রকাশের পর ইসলামাবাদের এ দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় নয়াদিল্লি।
১৯৭১ সালের পর এটাই দুই দেশের বিমানবাহিনীর মধ্যে পাল্টা-পাল্টা হামলার প্রথম ঘটনা।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের যে দুটি বিমান ভূপাতিত করেছে বলে জানায়, সেগুলো ছিল মিগ-২১ মডেলের বিমান। পশ্চিমা বিশ্ব এগুলোর নাম দিয়েছে ‘ফিশবেড’। ১৯৫০ সালে প্রথম এর নকশা করে মিকোয়ান। রাশিয়া ও চীনের পর ভারতই সবচেয়ে বেশি এ মডেলের বিমান ব্যবহার করে থাকে।
১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারত সীমিত পর্যায়ে পাকিস্তানে তাদের তাদের মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের পরীক্ষা চালায়।
১৯৬১ সালে ভারতের বিমানবাহিনী (আইএএফ) মিগ-২১ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯৬৪ সালে এটি আইএএফে প্রথম সুপারসনিক যুদ্ধবিমান হিসেবে যুক্ত হয়। আর২৫-৩০০ টার্বোজেটের ইঞ্জিনে এ বিমানগুলোর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় এক হাজার ৩৫০ মাইল। আইএএফে বর্তমানে ১২০টি এ মডেলের বিমান রয়েছে।
কিছুটা আগের আমলের নকশায় নির্মিত হলেও মিগ-২১ হামলার ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী। টার্গেটে হামলা করে কারো হাতেই ধরা না পরে ফিরে আসার মতো গতি ও যোগ্যতা রয়েছে এ বিমানটিতে। অনেক সুবিধা থাকার পরও ভারতের এ যুদ্ধবিমানগুলোকে এক সময় ‘উড়ন্ত কফিন’ নামেও আখ্যা দেয়া হতো। এ বিমানে পাঁচ শতাধিক দুর্ঘটনা এবং ২০০ পাইলট নিহত হওয়ার পর এ নাম দেয়া হয়েছিল।
১৯৫০ সালে এটি নির্মাণের সময় এর দাম পড়ত ২৯ লাখ ডলার। বর্তমানে এর দাম পড়ে আড়াই কোটি ডলারের সামান্য বেশি। ফলে পাকিস্তানের ভূপাতিত দুটি মিগ-২১ হারিয়ে পাঁচ কোটি ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৫৬ কোটি রুপি) ক্ষতির মুখে পড়ে গেছে ভারত।