দিল্লিতে রাষ্ট্রদোহে অভিযুক্ত ছাত্রনেতার মুক্তির দাবি

ভারতে দেশদ্রোহের মামলায় তিহার জেলে আটক জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউ-য়ের ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার তার জামিনের আবেদন জরুরি ভিত্তিতে শোনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন।
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জেএনইউ-তে দেশবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ নিয়ে সারা ভারত জুড়ে তোলপাড় চলছে, এবং আজ বৃহস্পতিবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র ও শিক্ষক কানহাইয়া কুমারের মুক্তির দাবিতে দিল্লির রাজপথে মিছিল করেছেন।
বিরোধী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেছেন, জেএনইউ-র মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে সরকার দেশবিরোধী তকমা দিতে চাইছে।
রাজধানী দিল্লির মান্ডি হাউস থেকে যন্তর মন্তর পর্যন্ত আজ বিকেলে জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক এক সদ্ভাবনা পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন – যেখানে তাদের প্রধান দাবি ছিল রাষ্ট্রদোহে অভিযুক্ত তাদের ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট কানহাইয়া কুমারের মুক্তি।
একদিকে আমাদের ছাত্রনেতাদের মিথ্যা অভিযোগে আটক করা হচ্ছে, অন্য দিকে আমাদের প্রতিষ্ঠান জেএনইউ-র এক ধরনের ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা চলছে আমরা না কি দেশবিরোধী ও সন্ত্রাসবাদী।শায়লা, জেএনইউ ছাত্র ইউনিয়ন ভাইস প্রেসিডেন্ট
ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শায়লা বলছিলেন, ‘‘একদিকে আমাদের ছাত্রনেতাদের মিথ্যা অভিযোগে আটক করা হচ্ছে, অন্য দিকে আমাদের প্রতিষ্ঠান জেএনইউ-র এক ধরনের ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা চলছে আমরা না কি দেশবিরোধী ও সন্ত্রাসবাদী। তো আমরা আসলে কী, সেটা দেখানোর জন্যই আজ আমাদের এই পদযাত্রা।’’
দিল্লির বুকে যখন এই মিছিল হচ্ছে, তখন শহরেরই অন্য প্রান্তে তিহার জেলের তিন নম্বর সেলে আটক কানহাইয়া কুমার – যেখানে রাখা হয়েছিল পার্লামেন্টে হামলার ঘটনায় ফাঁসির আসামি আফজল গুরুকেও।
নিম্ন আদালত ২রা মার্চ পর্যন্ত তার বিচারবিভাগীয় হেফাজত মঞ্জুর করলেও কানহাইয়ার আইনজীবী আজ সুপ্রিম কোর্টে তার জামিনের আবেদন জানিয়েছেন – দেশের শীর্ষ আদালত আগামিকাল তা শুনতে রাজিও হয়েছে।
এই জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা হবে না, দিল্লির পুলিশ কমিশনার বিএস বাসসি আজ এমন ইঙ্গিত দিলেও এ কথা মানতে চাননি যে গতকাল আদালতে পেশ করার সময় কানহাইয়া কুমারের ওপর হামলা তারা ঠেকাতে পারেননি।
মি বাসসি দাবি করেন, ‘‘জনতার ভিড়ে ধস্তাধস্তির মধ্যেও তার অফিসাররা অভিযুক্তকে ঘিরে রেখেছিলেন – সামনে ও পেছনের দিক থেকে। তবে ধাক্কাধাক্কিতে কানহাইয়ার একটা চপ্পল শুধু খুলে যায়। এমন কী পুলিশ কর্মীরা তার মাথার সামনে হাত দিয়ে রেখেছিলেন – যাতে কোনও ইঁটপাটকেল ছুটে এসে তাকে আঘাত করতে না-পারে।’’
কিন্তু দিল্লি পুলিশ যে নিম্ন আদালতে অভিযুক্তকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, সুপ্রিম কোর্ট প্রকারান্তরে আজ সেটাই মেনে নিয়েছে তার জামিনের আবেদন শুনতে রাজি হয়ে।
এদিকে আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে জেএনইউ ক্যাম্পাসে ১১ ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া কানহাইয়া কুমারের সেই বিতর্কিত ভাষণের ভিডিও – তাকে গ্রেফতার করার পেছনে যার একটা বড় ভূমিকা ছিল।
সরকার যেটা করছে, কয়েকজনকে কাঠগড়ায় তুলে একটা গোটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে তা মানা যায় না।রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস ভাইস প্রেসিডেন্ট
ওই বক্তৃতায় আরএসএস-বিজেপির দেশপ্রেমের কড়া সমালোচনা করলেও কানহাইয়া একবারও কোনও দেশবিরোধী মন্তব্য করেননি বলেই তার সমর্থকরা দাবি করছেন।
বিরোধী কংগ্রেসের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীও এদিন সকালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেছেন দেশদ্রোহ মোকাবিলার নামে সরকার জেএনইউ-র মতো প্রতিষ্ঠানকেই ধ্বংস করতে চাইছে।
তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি দেশবিরোধী কাজকর্ম করে দেশের আইন অনুযায়ী নিশ্চয় তার শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু সরকার যেটা করছে, কয়েকজনকে কাঠগড়ায় তুলে একটা গোটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে তা মানা যায় না। দেশের ছাত্রসমাজের ওপর আরএসএসের মৃত আদর্শকে চাপিয়ে দেওয়ার মতো বড় অপরাধ আর কিছুই হতে পারে না।’’
তবে বিরোধী কংগ্রেসও যে তথাকথিত দেশবিরোধী শ্লোগানে সমর্থনের অভিযোগ থেকে নিজেদের দূরত্ব বাড়াতে চাইছে তা মিঃ গান্ধীর কথায় স্পষ্ট হয়ে গেছে।
এরই মাঝে চলছে ভারতে মুক্তচিন্তা আর তর্কের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে জেএনইউ-র অস্তিত্ত্বের লড়াই। শুভজ্যোতি ঘোষ, বিবিসি বাংলা, দিল্লি