আন্তর্জাতিক সংবাদ

তুরস্ক কি এখনো একটি ‘গণতান্ত্রিক দেশ’ আছে?

চার বছর আগেও তুরস্ককে পশ্চিমা দেশগুলো মুসলিম দেশের জন্য একটি মডেল হিসেবে তুলে ধরতো।
কিছু ত্রুটি সত্বেও তুরস্ক তখন একটি গণতান্ত্রিক দেশ – যারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হবার জন্য আলোচনা করছে, কুর্দিদের সাথে একটি শান্তিচুক্তির দিকে এগুচ্ছে। বিক্ষুব্ধ মধ্যপ্রাচ্যে তাদের দেখা হতো একটি স্থিতিশীল দেশ হিসেবে – যদিও সবাই তার সাথে একমত ছিলেন না।
কিন্তু এখন?
এ সপ্তাহেই ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট নামে একটি সংগঠন আইনের শাসনের দিক থেকে বিশ্বের দেশগুলোর একটি তালিকা করেছে। তাতে তুরস্ক আছে ১১৩টি দেশের মধ্যে ৯৯ নম্বরে – ইরান আর মিয়ানমারেরও পিছনে।
সাংবাদিকদের কারারুদ্ধ করার ক্ষেত্রেও তুরস্ক এখন এক নম্বরে। বিবিসির সংবাদদাতা মার্ক লোয়েন বলছেন, তার প্রতিবেদনের জন্য অনেক তুর্কি বিশ্লেষক ভয়ে সাক্ষাৎকার দিতেই রাজি হন নি।
“এখানে গণতন্ত্র শেষ হয়ে গেছে” – বিবিসিকে বলেন কুর্দি রাজনৈতিক দল এইচডিপির ডেপুটি প্রেসিডেন্ট হিসিয়ার ওজসই।
তার কথায়, “এমনিতেই আমাদের খুব বেশি গণতন্ত্র ছিল না। এখন যতটুকু ছিল তাও নেই হয়ে গেছে। ”
জুলাই মাসের ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর তুরস্কের সবক্ষেত্রে এখন সরকারের ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলছে। এ পর্যন্ত ৩৭ হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ১০ হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনের সমর্থক হবার কারণ দেখিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছে।
১৩৭ জন শিক্ষাবিদের নামে গ্র্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ১৭০টির মতো সংবাদ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে হোয়টসএ্যাপ, টুইটার।
পিকেকে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কুর্দি কাটুনিস্ট, রাজনীতিবিদ, শহরের মেয়রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলেছে, তুরস্ক সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তুর্কি প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেছেন, আমরা ইইউএর লাল রেখার তোয়াক্কা করি না।
যারা এই শুদ্ধি অভিযানের শিকার হয়েছেন, তারা বলছেন তুরস্কে আর গণতন্ত্র নেই। কিন্তু তুরস্কের বাকি অর্ধেক লোক প্রেসিডেন্টএরদোয়ানকে গভীরভাবে সম্মান করেন।
তারা মনে করেন বহির্বিশ্ব মি. এরদোয়ানকে বুঝতে পারছে না, কিন্তু তিনি তুরস্কে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন।
তারা বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব গুলেনপন্থী আর পিকেকের হুমকি অনুধাবন করতে পারছে না।
তাদের যুক্তি: সব রাজনীতিবিদই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু মি.এরদোয়ান অন্তত দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে সাম্য এনে দিয়েছেন হাসপাতাল-স্কুল গড়ে তুলেছেন, এবং একজন বড় নেতা হয়ে উঠেছেন – যা তাদের অনেকদিনে আকাঙ্খা ছিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button