তারা এক নিষ্ঠুর গোলক ধাঁধায় আটকে থাকলো (৫১)
কাজল ঘোষ
আমি লস অ্যানজেলেসগামী বিমানে উঠার পথেই সিদ্ধান্ত নিলাম সান ফ্রান্সিসকো সিটি হল হয়ে যাবো। সেখানে লোকজন ভিড় করে অবরোধ করে রেখেছে ভেতরে প্রবেশ করবে বলে। তারা চূড়ান্ত ক্ষণ গণনা করেছে সরকার যেন বুঝতে পারে তারা যাকে ভালোবাসবে তাকেই বিয়ে করতে পারবে এমন একটি স্পষ্ট ঘোষণার জন্য। বিষয়টি স্পষ্ট হবে এমন আনন্দে শামিল হতে উন্মুখ সকলেই। কেউ কেউ যুগের পর যুগ অপেক্ষা করেছেন সেই ক্ষণটির জন্য।
আমি আমার গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে অফিসের দিকে যাওয়ার পথে একজন কর্মকর্তার মুখোমুখি হলাম। ‘কমালা, তুমি এসো আমাদের সাহায্য করো। এক গাল হাসি নিয়ে তিনি কথাগুলো বলছিলেন।
‘আমাদেরকে বিয়ে দেয়ার জন্য আরো মানুষ দরকার।’ আমি সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে উৎফুল্ল ছিলাম।
আমি সেখানে একাধিক নগর কর্মকর্তার সঙ্গে শপথ পাঠ করি। আমরা হলভর্তি সকলের পাশে থাকার কথা বলতেই চিৎকার আর কৌতূকে ভরে যায় চারপাশ। যখন আমরা প্রেমময় জুটিদের স্বাগত জানাচ্ছিলাম তখন হলরুম উচ্ছ্বাসে ভরে গিয়েছিল। অধিকার আদায়ের শপথ শেষে তারা বিয়ে করতে যাচ্ছিল। আমি জীবনে প্রথমবারের মতো এমন একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। যেটি ছিল অসাধারণ।
অথচ আইনের সংশোধন না হওয়ায় কিছুক্ষণ পরই এই বিয়েগুলো অবৈধ হয়ে যায়। জুটিগুলো সেই চিঠির অপেক্ষায় যা শুনে তারা খুশি হবে এবং আশাবাদী হবে যে তাদের বিয়ের সনদ আইনের চোখে আর অবৈধ নয়। আইনের সংশোধন না হওয়ার এ খবরটি ছিল তাদের জন্য অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক।
২০০৮ সালের মে মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট আমাদেরকে উদ্ধার করলেন। এই আদালত শুনানি শুরু করে যে সমলিঙ্গের বিয়ে নিষিদ্ধ অসাংবিধানিক। সমলিঙ্গের জুটিরা যে বিপরীত লিঙ্গের সম্পর্কে আবদ্ধ জুটিদের মতোই একইভাবে সমান মর্যাদার অধিকারী আদালতের এই নির্দেশনায় তাদের বৈধতার পথ প্রশস্ত হলো। রোনাল্ড জর্জ যিনি আমাকে সান ফ্রান্সিসকোর অ্যাটর্নি জেনারেল পদের জন্য শপথ পড়িয়েছেন তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠের মত লিখেছিলেন। এবং পরের ছয় মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার ১৮ হাজার সমলিঙ্গের মানুষ তাদের মধ্যে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
একই বছরের নভেম্বরে অর্থাৎ ২০০৮ সালের নভেম্বরে একই রাতে বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ক্যালিফোর্নিয়ার জনগণ তাকেই ভোট দিয়েছিল প্রপ-৮ সমলিঙ্গের বিয়ের অধিকার বিষয়ক আইনের সংশোধনী পাসের জন্য। কারণ, এটি ছিল সাংবিধানিক অধ্যাদেশ। এটা কোনোভাবেই রাজ্যের আদালত বা আইনপ্রণেতাদের মাধ্যমে বাতিল সম্ভব ছিল না। সমলিঙ্গের মধ্যে নতুন কোনো বিয়ে অনুষ্ঠিত হতে পারছিল না আইনটির সংশোধন না হওয়ায়। যে সব জুটি বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে তারা এক নিষ্ঠুর গোলকধাঁধার আবর্তেই আটকে থাকলো।
এখানে একটি পরিষ্কার রাস্তা ছিল এটি বাতিলের আর তা হচ্ছে ফেডারেল কোর্টে যাওয়া। আমেরিকায় মানুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চাড গ্রিফিন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এ বিষয়ক জটিলতার নিরসনে সর্বোত্তম পথ হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করে দেয়া। আদালতে আর্জি জানানো যে, ১৪তম সংশোধনী আনা জরুরি আইনের চোখে সকলের সমান অধিকার এই বিবেচনায়। কারণ, প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করছে প্রপ-৮। এটি নাগরিক অধিকার এবং নাগরিকের ন্যায়বিচারের বিষয়। গ্রিফিন এবং তার টিম এরকম সকল বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করার পরিকল্পনা করে। সংগঠনটি বুশ বনাম আল গোরের বিরুদ্ধে লড়তে আইনজীবী নিয়োগ দেয়। এরপর তারা সমলিঙ্গের অধিকার চেয়ে মামলা করে। ক্রিস প্যারি এবং স্যান্ডি দুই বোন, পল কাতামি এবং জেফ জারিলো তাদের কাজ ছিল লাখো মানুষের অধিকারের প্রশ্নে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা তাদের ভালোবাসার অধিকার এবং বিয়ের মর্যাদা নিয়ে লড়ছে।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে/
সুত্র : মানবজমিন