জিতলে ফাইনাল, হারলে বিদায়। ডু অর ডাই ম্যাচের সমীকরণে তামিমদের পথচলা আশাব্যাঞ্জকই ছিল। জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৬৪ রান, ৪১ ওভারে। খুব কঠিন কিছু ছিল না। একটা সময় মনে হচ্ছিল জিতেই যাবে তামিমরা। তবে শেষের দিকে এসে তরি ডুবল। বুধবার প্রেসিডেন্টস কাপে নাজমুল একাদশের কাছে সাত রানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ল তামিম একাদশ। ফাইনালে উঠে গেল নাজমুল একাদশ। তামিমদের বিদায়ে ফাইনালের রাস্তা পরিষ্কার হলো মাহমুদউল্লাহদেরও। আগামী শুক্রবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মিরপুরে মুখোমুখি হবে নাজমুল-মাহমুদউল্লাহ শিবির।
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচ ৪১ ওভারে নেমে এসেছিল। আগে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল একাদশ ৩৯.৩ ওভারে অলআউট ১৬৫ রানে। জবাবে বৃষ্টি আইনে তামিমদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬৪ রান। দুই বল বাকি থাকতে তামিমরা অলআউট হয় ১৫৬ রানে। তিন জয়ে ৬ পয়েন্ট নাজমুল একাদশের। দুই জয়ে চার পয়েন্ট মাহমুদউল্লাহদের। এক জয়ে দুই পয়েন্ট সংগ্রহ তামিমদের।
শেষ ওভার অবধি ম্যাচে ছিল উত্তেজনা। ৬ বলে তামিমদের দরকার ছিল ১৫ রান। ক্রিজে সাইফউদ্দিন ছিল বলেই আশা ছিল। কিন্তু পার্ট টাইম বোলার সৌম্য দেখান ঝলক। প্রথম বল ডট। দ্বিতীয় বলে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট শরিফুল। তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান সাইফউদ্দিন। ম্যাচে আসে রোমাঞ্চ। কিন্তু চতুর্থ বলে ছক্কা হাকাতে গিয়ে সাইফ তালুবন্দী হন রিশাদ হাসানের। অল আউট তামিম শিবির।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তামিমদের শুরুটা ছিল বেশ ধীরলয়ে, দেখে শুনে। তারপরও টিকতে পারেননি এনামুল হক বিজয় (১৩ বলে ৭)। দলীয় ১০ রানে তাসকিনের বলে হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অঙ্কনকে সাথে নিয়ে তামিমের পথচলা ছিল বেশ সাবলিল। এই জুটি ভাঙে দলীয় ৭৮ রানে। ২২ রান করা অঙ্কনকে রান আউট করেন তাসকিন।
অধিনায়কের দায়িত্ব তখনো পালন করে গেছেন তামিম ইকবাল। তিনি আউট হন ফিফটি করেই। ৮৫ বলে ছয় চারে ৫৭ রানে তিনি ফেরেন আবু জায়েদ রাহির বলে ইরফানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। দলীয় রান তখন ১০১, ওভার ২৭.২।
তামিমের বিদায়ের পর মোহাম্মদ মিঠুন ছাড়া কেউ টিকতে পারেনি বেশিক্ষণ। ৩২ বলে ২৯ রান করেন তিনি। মোসাদ্দেক, মেহেদী, আকবর দলের ভীষণ প্রয়োজনে ছুতে পারেননি দুই অঙ্কের রান। সাইফউদ্দিন ১০ রান করেন। শরিফুল রানের খাতা খুলতে পারেনি। তবে রানের খাতা খুলতে না পারা মোস্তাফিজ ছিলেন অপরাজিত। নাজমুল একাদশের সেরা বোলার তাসকিন। ৮ ওভারে ৩৬ রানে নেন তিনি চার উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নামা নাজমুল একাদশের শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় ৯ রানেই সাইফের বলে বিদায় নেন ওপেনার সৌম্য সরকার। কিছুক্ষণ পর ধীর-স্থিরভাবে খেলতে থাকা পারভেজ হোসেনকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান। দলের দুঃসময়ে হাল ধরতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। ৫ রান করে মোস্তাফিজের শিকার তিনি।
২৫ রানেই ৩ উইকেট হারানো দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব নেন মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তারা। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি।
১৫ ওভার শেষে বৃষ্টি বাধায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। নাজমুল একাদশের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৫৪ রান। বৃষ্টির কারণে খেলা ১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট বন্ধ থাকে। ম্যাচ নেমে আসে ৪১ ওভারে। বিরতির পরও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে থাকেন মুশফিক ও আফিফ। চতুর্থ এই জুটিতে ৯০ রান পায় নাজমুল একাদশ।
জুটি গড়ার পথে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ছন্দ ফিরে পাওয়া মুশফিক। ৭৫ বলে তিনি করেন ৫১ রান। ৩টি চার ও একটি ছক্কায় দারুণ ইনিংস খেলা মুশফিক সাউফউদ্দিনের দ্বিতীয় শিকার।
এরপর আফিফও বেশি সময় টিকতে পারেননি। বাঁহাতি তরুণ এই ব্যাটসম্যান ৬১ বলে ৪টি চারে ৪০ রান করেন। আফিফের বিদায়ের পর নাজমুল একাদশের ইনিংস মুখ থুবড়ে পড়ে। কোনো ব্যাটসম্যানই পারেননি দলের রানচাকা সচল রাখতে। ৫ উইকেট নেওয়া সাইফউদ্দিন শেষের দিকে একাই নাজমুল একাদশকে চেপে ধরেন। মোস্তাফিজ ৩টি ও মেহেদী ২টি উইকেট নেন।