sliderউপমহাদেশশিরোনাম

ডোকলামে চীনের সামরিক গ্রাম, চিন্তায় ভারত

চীন-ভারত সীমান্তে ভুটানের ডোকলামের কাছে চীন নির্মাণ করছে কয়েকটি গ্রাম। একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রাম দেখতে পাওয়া যাচ্ছে উপগ্রহ-চিত্রে। এছাড়া আরো একটি গ্রাম তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। কোনো কোনো সূত্রে ভুটান সংলগ্ন ডোকলামের কাছে চীন মোট চারটি গ্রাম তৈরি করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
সামরিক লক্ষ্যে গড়া এসব কাঠামো থেকে নানা রকম সুবিধা পেতেই পারে চীন। সীমান্তে চীনের ক্রমবর্ধমান এসব তৎপরতায় উদ্বেগে রয়েছে ভারত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে নতুন কিছু উপগ্রহ চিত্র। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারত-চীন সীমান্তে ভুটানের ডোকলাম পাসের কাছে আস্ত একটি গ্রাম তৈরি করে ফেলেছে চীন। তার পাশ দিয়ে একটি বাইপাস রাস্তাও তৈরি করছে তারা।
ওই রাস্তা দিয়ে আমো চু নদীর ধার দিয়ে চীন একটি পাহাড়চূড়া পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। যেখান থেকে ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের ওপর নজর রাখতে পারবে চীন।
২০১৭ সালে ডোকলামে চীন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর দীর্ঘ স্ট্যান্ডঅফ হয়েছিল। দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছিল। দুই দেশের দীর্ঘ আলোচনার পর সেই সমস্যার সমাধান হয়েছিল।
নতুন উপগ্রহচিত্রে দেখা যাচ্ছে, ডোকলামের নয় কিলোমিটার দূরে পাংদা বলে একটি আস্ত গ্রাম তৈরি করে ফেলেছে চীন। উপগ্রহ চিত্রে কেবল গ্রামের বাড়ি নয়, পার্কিংয়ে গাড়ি রাখার ছবিও উঠে এসেছে। অর্থাৎ, ওই গ্রামে মানুষ বসবাস করতে শুরু করেছে। ভারতের দাবি, যেখানে ওই গ্রাম তৈরি হয়েছে, তার প্রায় ১০ কিলোমিটার অঞ্চল ভুটানের ভূখণ্ড। অর্থাৎ ভুটানে ঢুকে চীন ওই গ্রাম তৈরি করেছে।
এখানেই শেষ নয়, ওই গ্রামের পাশের আমো চু নদীর ধার দিয়ে একটি রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে চীন। সারা বছর ওই রাস্তা ব্যবহার করা যাবে। ওই রাস্তার একটি অংশও ভুটানের ভূখণ্ড বলে ভারতের দাবি। ওই রাস্তা দিয়ে ডোকলাম মালভূমির কৌশলগত এলাকায় চীন পৌঁছে যেতে পারে।
ভারতীয় সামরিক কাঠামোকে বাইপাস করে ওই রাস্তা যদি ডোকলামের স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্টে পৌঁছে যায়, তাহলে সেখান থেকে ভারতের উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের উপর নজরদারি চালাতে পারবে চীন।
শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এলাকা। ২২ কিলোমিটারের ওই করিডোর গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের একমাত্র সংযোগরক্ষাকারী রাস্তা। ফলে চীন ওই রাস্তার ওপর নজরদারি চালালে ভারতের সামরিক কৌশল বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
ভারতের অবসরপ্রাপ্ত লেফটন্যান্ট জেনারেল প্রবীণ বক্সি এক সময় পূর্ব সীমান্তের কমান্ডার ছিলেন। ডোকলাম সংকটের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ‘চীনের পাংদা গ্রাম নির্মাণ এবং তার উত্তর ও দক্ষিণে কাঠামো নির্মাণ স্পষ্ট করে দেয়, কিভাবে তারা ঝাম্পেরি রিজ এবং ডোকলামে নিজেদের আধিপত্য তৈরি করতে চাইছে।’
এভাবে ওই অঞ্চলে চীন নিজেদের আগ্রাসন বজায় রাখছে বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সূত্র এনডিটিভিকে জানায়, ‘চীনের সমস্ত কার্যকলাপের দিকে ভারত নজর রেখেছে। দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য ভারতীয় বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।’ তবে ভারত ওই অঞ্চলে কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা স্পষ্ট করে জানাননি তিনি।
নতুন উপগ্রহ চিত্রে স্পষ্ট যে, আমো চু নদীর ধারে আরো একটি গ্রাম তৈরির কাজ চীন প্রায় শেষ করে ফেলেছে। আরো দক্ষিণে নতুন একটি গ্রাম তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আমো চু নদীর ওপর একটি সেতুও তৈরি করে ফেলেছে তারা।
এ বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো কথা বলতে চায়নি। তবে বিষয়টি যে ভারত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা তা নিশ্চিত করেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button