sliderঅপরাধশিরোনাম

ডিজিএফআই অফিসে মানবাধিকারকর্মীরা, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি

বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষায় সরব একটি সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ মঙ্গলবার ঢাকা সেনানিবাসে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) অফিসের সামনে জড়ো হয়েছিল। মানবাধিকারকর্মীরা যখন ডিজিএফআই অফিসের সামনে জড়ো হয়েছিল তার আগেই বহু বছর নিখোঁজ থাকা জামায়াতে ইসলামী সাবেক দুই শীর্ষ নেতার দুই ছেলের খোঁজ মিলেছে।

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন গত ১৫ বছরে যেসব মানুষকে গুম করার অভিযোগ উঠেছিল তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ‘মায়ের ডাক’ নামের সংগঠনটি গড়ে ওঠে। গত এক দশক ধরে এই সংগঠনটি গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে।

‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার তাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস ও জাতিসঙ্ঘ ঢাকা অফিসের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান হুমা খান।

জাতিসঙ্ঘের দুই কর্মকর্তা প্রথমে ডিজিএফআই অফিসের ভেতরে যান। সেখানে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আবার বাইরে ফিরে আসেন। এরপর ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের চারজন প্রতিনিধিকে ডিজিএফআই অফিসের ভেতরে নেয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র প্রতিষ্ঠান আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের সাথে বিবিসি বাংলার তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ডিজিএফআই-এর তরফ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘তারা আমাদের জানিয়েছেন যে গত ১৫ বছরে গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, সেটা তারা অস্বীকার করছেন না। তিনি বিষয়টি নিয়ে সেনাপ্রধানের সাথে কথা বলবেন এবং বুধবারের মধ্যে আমাদের আপডেট জানাবেন।’

ডিজিএফআই কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সানজিদা ইসলাম বলেন, তারা অস্বীকার করছেন না যে গত ১৫ বছরে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তারা বলেছেন, ডিজিএফআই ছাড়াও আরো গোয়েন্দা সংস্থা আছে এবং সেখানে মানুষ আটক থাকতে পারে।

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় গত ১৫ বছরে বহু মানুষকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো অভিযোগ ছাড়াই তুলে নিয়ে যায়। কারো কারো বিরুদ্ধে মামলা ছিল। তুলে নিয়ে যাওয়া বহু ব্যক্তির খোঁজ বছরের পর বছর গড়িয়ে গেলেও মেলেনি।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, তাদের ‘গুম’ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসঙ্ঘের দিক থেকে অনেক প্রশ্ন আর সমালোচনার মুখে পড়েছিল শেখ হাসিনা সরকার। তবু তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তারা নিজেরাই আত্মগোপনে আছে।

ইতোমধ্যে দীর্ঘ আট বছর পর অজ্ঞাত স্থানে আটক থাকা সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী মুক্ত হয়েছেন। আযমী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মরহুম গোলাম আজমের মেজো ছেলে।

জামায়াতে ইসলামীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে তার ‘ফিরে আসার’ বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও তিনি কোথা থেকে ফিরে এসেছেন সেটি উল্লেখ করা হয়নি।

অন্যদিকে বহু বছর নিখোঁজ থাকার পর ফিরে এসেছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে আহমেদ বিন কাশেম। মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও আহমেদ বিন কাশেমকে ঢাকার দিয়াবাড়ি এলাকায় বেরিবাঁধ এলাকায় পাওয়া গেছে বলে জানা যাচ্ছে।

ব্রিটেনে আহমেদ বিন কাশেমের আইনজীবী মাইকেল পোলাক বলেন, আটক হবার পর তার ভাগ্যে কী ঘটেছে সেটি নিয়ে তারা অনিশ্চয়তায় ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘গত শাসনামলে আটক হওয়া রাজনৈতিক বন্দীদের দ্রুততার সাথে মুক্তি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা আশাবাদী। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে এই সঙ্কেত পাওয়া যাচ্ছে যে মানবাধিকারের বিষয়ে তারা ইতিবাচক। এখন অন্য বন্দীদের ব্যাপারে তথ্য তাদের পরিবারের কাছে জানানো হবে বলে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।’

সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই যারা এখনো অজ্ঞাত স্থানে আটক আছেন তাদের যেন সসম্মানে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। তাদের যেন এখানে-সেখানে ছেড়ে দেয়া না হয়।’

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে ঢাকার বড় মগবাজারের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে আটক করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দিয়েছে।

তবে আযমীকে আটকের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনোই স্বীকার করেনি।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে আহমেদ বিন কাশেমকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যায় ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে।

তার পরিবার তখন অভিযোগ করেছিল, সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী কয়েকজন ব্যক্তি তাকে মিরপুর ডিওএইচএসের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে।

আহমেদ বিন কাশেম পেশায় একজন আইনজীবী এবং তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানাও ছিল না বলে জানিয়েছিলেন তার স্ত্রী।
সূত্র : বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button