মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ইয়াবা ও হেরোইন সহ গ্রেফতার হওয়া মোশারফ হোসেন নামের পুলিশের এক কনস্টেবলকে বাঁচাতে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য মামলার বাদী ঠাকুরগাঁও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ অভিযোগপত্রের পাতায় অগ্রগামীর জন্য ওই দপ্তরের সহকারী পরিচালকের অনুপস্থিতিতে তার স্থলে নিজেই সই করেছেন। পরে ওই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০২ পিস ইয়াবা ও পাঁচ গ্রাম হেরোইন সহ আতিকুল ইসলাম আতিক (মাদক কারবারি) ও পুলিশ কনস্টেবল মোশারফ হোসেনকে গ্রেফতার করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করেন ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক আজাহারুল ইসলাম। এজাহারে আরও বলা হয়, গ্রেফতার দুজনই দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ও হেরোইনের ব্যবসা করে আসছিল।
অন্যদিকে কনস্টেবল মোশারফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ঠাকুরগাঁও জেলায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি খাগড়াছড়িতে কর্মরত। গত ২৫ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক সৌমিক রায় বদলি হয়ে যান। এতে ওই পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। একই সময় মামলার অভিযোগপত্র তৈরি করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। সহকারী পরিচালকের অনুপস্থিতিতে তার সিল ব্যবহার করে মামলার বাদী ফরহাদ আকন্দ নিজেই অভিযোগপত্র অগ্রগামীর জন্য সই করেন। পরে ২১ মে ওই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। অভিযোগপত্রে আতিকুল ইসলাম আতিককে অভিযুক্ত করা হয় এবং পুলিশ কনেস্টবল মোশারফ হোসেনকে অব্যাহতির জন্য সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী পরিচালক সৌমিক রায় বলেন, ‘গত ২৫ এপ্রিল আমার বদলি হয়ে যায়। অভিযোগপত্র থেকে আসামির নাম বাদ দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই।’ অভিযোগ প্রসঙ্গে মামলার বাদী ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ বলেন, ‘সফট কর্নার থেকে অভিযোগপত্রে কনস্টেবল মোশারফ হোসেনের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আদালতে সুপারিশ করা হয়েছে। অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় এখানে সহকারী পরিচালক ছিলেন না। তাই নিজেই অভিযোগপত্র অগ্রগামীর জন্য সহকারী পরিচালকের পক্ষে সই করে আদালতে জমা দিয়েছি।’ ঠাকুরগাঁও জজ কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফ্ফর আহমেদ মানিক বলেন, ‘দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক বদলি হয়েছেন। এ সুযোগে ওই কর্মকর্তার সিল ব্যবহার করে সই দিয়ে অভিযোগপত্র অগ্রগামী করেন মামলার বাদী। এটি জালিয়াতি কাজ। কোনোভাবেই এটি বাদী করতে পারেন না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর অথবা আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।’জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার কর্মস্থল নীলফামারী। গত ২৮ মে অতিরিক্ত হিসেবে আমাকে ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।’তিনি আরও বলেন, মাদক মামলা থেকে আসামিকে উপযুক্ত ডকুমেন্টস ছাড়া বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে সহকারী পরিচালকের সিল ব্যবহার করে সই করার বিষয়টি নজরে এসেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক আলী আসলাম হোসেন বলেন, অভিযোগপত্রের পুরো বিষয়টি জানতে চেয়েছি। অভিযোগপত্র দাখিলে অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।