Uncategorized

টিকাদান কর্মসূচি? নাকি কোনো উৎসব?

নওগাঁ প্রতিনিধি ঃ নওগাঁয় শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। সবাই টিকা দিতে এসেছে, ভিড় জমিয়েছে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সদর হাসপাতালে। তাদের কারও কারও সঙ্গে এসেছেন অভিভাবকও। লোকজনের এমন ভিড়ে বাঁধে জটলা। কার আগে কে টিকা নেবে, তা নিয়ে চলে হুড়োহুড়ি। ফলে টিকা দিতে পারেনি অনেকেই।
নওগাঁর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সদর হাসপাতাল ও জিলা স্কুলে অস্থায়ী টিকাকেন্দ্রে রবিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ দৃশ্য দেখা গেছে। এ কি টিকাদান কর্মসূচি? নাকি কোনো উৎসব তা দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। অথচ সেখানে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি কিংবা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউই। অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক।
সরেজমিন দেখা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা হাসপাতাল ও জিলা স্কুলের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ছিল টিকাপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। বুথের সামনেও ছিল গাদাগাদি। ছাত্র-ছাত্রীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে এবং সিরিয়াল ঠিক রাখতে স্বাস্থ্যকর্মীরা বারবার তাগাদা দিলেও তা প্রথমে কেউ কানে নেয়নি। পরে পুলিশ সদস্যরা এসে সারি ঠিক করার চেষ্টা করে। তাও কে শোনে কার কথা! ছাত্রীদের সারি ঠিক করা গেলেও ছাত্রদেরটা করা যায়নি। সব জায়গায় ছিল গাদাগাদি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরা এসে জটলা আরও বাড়িয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ লোকের মুখে মাস্ক ছিল না। তাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮৫ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ওই টিকা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার ২৭ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
এনায়েতপুর দাখিল মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার অঞ্জিলা বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। আমাদের মাদ্রাসা থেকে প্রায় ১৫ টি ইজিবাইকে করে আমরা জিলা স্কুলে এসেছি। প্রচুর ভিড়। স্যাররাও সঙ্গে আছেন। আমি ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করার পর টিকা নিতে পেরেছি। অন্য সহপাঠীদের জন্য অপেক্ষা করছি। সবাই একসঙ্গে বাড়িতে ফিরব।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার তৃষ্ণা বলেন, ‘এখানে লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়মের বালাই নেই। কেউ শারীরিক দূরত্ব মানছে না। সবাই গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছে। এতে কারও করোনা হয়ে থাকলে অন্যদের মধ্যেও তা সংক্রমিত হবে। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ধুলাবালু। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সদর হাসপাতালে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনরত নওগাঁ সদর মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এসআই) উজ্জল বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে আমরা ৬ জন দায়িত্ব পালন করছি। টিকাকেন্দ্রে কিছুক্ষণ পরপর শিক্ষার্থীদের ঢোকানো হচ্ছে। একদল বের হলে আরেক দল পাঠানো হচ্ছে।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব। তবে হাসপাতালে অবকাঠামোগত সংকট রয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে টিকা দেওয়া হচ্ছে।’
টিকা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা একাডেমি সুপারভাইজার এস এম ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী, বেলা দুইটা পর্যন্ত টিকা দেওয়ার কথা। কিন্তু গতকালও আমরা বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দিয়েছি। সীমিত জনবল নিয়ে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা কোনো শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না। এ ছাড়া টিকা দেওয়ার পরও আরও অনেক কার্যক্রম থাকে। এগুলো সম্পন্ন করতে করতে আমাদের প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।’
নওগাঁ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী আসছে, তাদের প্রত্যেককে টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের চাপ অনেক বেশি। বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button