sliderগণমাধ্যমশিরোনাম

টিউলিপকে প্রশ্ন করায় ব্যারিস্টার আরমানের বাড়িতে অভিযান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মরহুম মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেমের নিখোঁজের বিষয়ে শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিককে প্রশ্ন করেছিলেন এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। এরপরই আহমেদ বিন কাসেম যিনি ব্যারিস্টার আরমান হিসেবেও পরিচিত তার বাড়িতে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে গুম হন মীর আহমেদ বিন কাসেম। এরপর দীর্ঘ আট বছর গুম ছিলেন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলে দীর্ঘ আট বছর পর বাড়ি ফেরেন তিনি। নিখোঁজ আরমানের ব্যাপারে ২০১৭ সালে শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে প্রশ্ন করেছিলেন এক ব্রিটিশ সাংবাদিক।

টিউলিপ যেহেতু ব্রিটেনের নাগরিক ও এমপি ছিলেন। তাই ওই সাংবাদিক মনে করেছিলেন, হাসিনার কাছে একটি ফোন করলে আরমান হয়ত মুক্তি পেতে পারেন।

ফিনান্সিয়াল টাইমসকে ব্যারিস্টার আরমান বলেন, চ্যানেল-৪ প্রতিবেদনটি প্রচার করার কয়েক ঘণ্টা আগে তার ঢাকার বাড়িতে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা আরমানের স্ত্রীকে চুপ থাকতে বলে। বাইরের দেশের কার কার সাথে আমার স্ত্রীর যোগাযোগ আছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করে। তাকে এমনভাবে হেনস্তা করে যেন কোনো সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি পরবর্তীতে তার ক্ষমতা ও প্রশাসন ব্যবহার করে আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করান বলে অভিযোগ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমার ব্যাপারে টিউলিপকে জিজ্ঞেস করার বিষয়টি কোনোভাবে যেন শেখ পরিবারকে আঘাত করেছিল। এ কারণে প্রশাসন থেকে এমন আচরণ করা হয়েছিল।’

ব্যারিস্টার আরমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তার বাবার আইনজীবী দলের সদস্য হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিনা বিচারে বাংলাদেশের একটি গোপন কারাগারে বন্দী ছিলেন।

যুক্তরাজ্যে আইনজীবী হিসেবে প্রশিক্ষণ নেয়া ব্যারিস্টার আরমান স্বৈরাচারীর শাসনামলে কুখ্যাত ‘আয়নাঘরের’ আটক থাকা শতাধিক বন্দীদের একজন। আয়নাঘরের আটক থাকাকে তিনি ‘মৃত্যুর চেয়েও খারাপ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি জানান, তিনি হাতকড়া পরা অবস্থায় ছিলেন। তিনি সূর্যের আলোর দেখা পেতেন না।

চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিক ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে যান। তাকে ব্যারিস্টার আরমান সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, ‘আপনার একটি ফোন কল অনেক পার্থক্য গড়ে দিতে পারে’। তখন ওই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন টিউলিপ। তিনি তাকে উল্টো জিজ্ঞেস করেন, ‘আরমান কী তার সংসদীয় আসনের কেউ? তিনি কী ব্রিটিশ?’ জবাবে সাংবাদিক বলেন, ‘আরমান বাংলাদেশী। তার পরিবার আপনার কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছে কিছু করার জন্য।’ তখন টিউলিপ বলেন, ‘আপনি কি জানেন আমি ব্রিটিশ এমপি এবং আমার জন্ম হয়েছে লন্ডনে।’ চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিক বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সাথে আপনার গভীর সম্পর্ক আছে। আপনি নিজেই বলেছেন আপনি আওয়ামী সরকারের মুখপাত্র। আপনার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ ওই মুহূর্তে টিউলিপ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনি কী বলতে চান আমি বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ? আমি ব্রিটিশ এমপি। আমাকে বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ বলার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।’ এটি বলে তিনি চলে যেতে থাকেন। তখন ওই সাংবাদিক বলতে থাকেন, ‘আপনি আরমানের ব্যাপারে একটি ফোন দিতে পারবেন না? কেন পারবেন না।’

ব্যারিস্টার আরমান লন্ডনে পড়ালেখা করেছেন। ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বাবার বিচার চলাকালে তিনি তার আইনজীবীর ভূমিকা পালন করছিলেন। ঠিক তখনই তাকে গুম করা হয়। আরমানের ব্রিটিশ আইনজীবী মাইকেল পলক বলেছেন, ‘চ্যানেল- ৪ কে যেন ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করতে, সেজন্য তার বাড়িতে ওইদিন র‌্যাবের সদস্যরা গিয়েছিল। দেখুন, আপনি একজন ব্রিটিশ এমপিকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, এরপরই র‌্যাবের মতো বাহিনীর কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন। যেটি হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত।

সাংবাদিকদের সাথে টিউলিপ সিদ্দিকের মুখোমুখি হওয়ার ফুটেজটি তিন দিন পর ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় সম্প্রচারিত হয়।

আরমানের মতে, এটি সম্প্রচার হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) তার বাসা ঘিরে ফেলে। তিনি জানান, প্রায় ১২ জনের একটি সশস্ত্র দল বাসায় প্রবেশ করে। ওই সময় তারা তার স্ত্রীর বিদেশে যোগাযোগ করার তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।

আরমানের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনজীবী মাইকেল পলক জানান, তিনি বিশ্বাস করেন অভিযানটি কাসেমের পরিবারকে চ্যানেল-৪ এর ফুটেজটি সম্প্রচার না করার জন্য চাপ দেয়ার একটি প্রচেষ্টা।

পলক বলেন, ‘এখানে পার্লামেন্টের একজন সদস্যের কাছে কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলো, আর এর কারণে গুম, হত্যা ও অত্যাচারের জন্য পরিচিত একটি নিরাপত্তা দল থেকে হুমকি এলো।’

যুক্তরাজ্যে অবৈধ অর্থের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দায়িত্বে থাকা টিউলিপ সিদ্দিকের নাম গত মাসে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি তদন্তে এসেছিল।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button