তানজিল, তজুমদ্দিন প্রতিনিধি:গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে তজুমদ্দিনের ৫টি ইউনিয়নে তলিয়ে গেছে প্রায় কয়েক হাজার একর আমন ধানের নিচু জমি। হঠাৎ করে এমন বৃষ্টিতে কষ্টের রোপণ করা আমন ধানের জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন অনেক কৃষক। এছাড়াও অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন কেটে খাওয়া ওই কৃষকেরা।
জানা গেছে তজুমদ্দিন উপজেলায় মোট ১১ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে লাগানো হয়েছে আমন ধানের চারা। চারা লাগানোর পর থেকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমেই বেড়ে উঠছিল সোনালি আমন ধান। কিন্তু হঠাৎ করেই টানা তিন দিনের বৃষ্টিপাত যেন সব কিছু তচনচ করে দিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়,অনেকেই ধার-দেনা করে রোপা আমন আবাদ করেছেন। এই বৃষ্টি তাদের হাসি, ঘুম কেড়ে নিয়েছে। চরম হতাশা আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, হেক্টরের পর হেক্টর রোপা আমন জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকেই জমির কাছে বসে দুশ্চিন্তা করছেন।
শম্ভুপুর ইউনিয়নের মুচিবাড়ির কোনা নামক এক বাজারে এক চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গরম–গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন ইব্রাহিম,রাজমিস্ত্রি শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। ইব্রাহীম বলেন,বাজারে পশ্চিম পাশে এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ করছেন তাঁরা। সকাল আটটায় ওই কাজে যাওয়ার কথা ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে চলে যান। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আজ আর কাজ করা সম্ভব হয়নি। এক দিন কাজ করলে মজুরি হিসেবে ৭৫০ টাকা পেতেন বলে জানান তিনি।
এদিকে বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে খাল-বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সদ্য রোপণ করা আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়লে ধানের খেত টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।
উপজেলা শম্ভুপুর ইউনিয়নের গোলকপুর গ্রামের,ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মফিজ মিয়া বলেন, গত দুই দিনের টানা বৃষ্টির পানি বেড়ে যাওয়া আমার ২৪০ শতক রোপন করা আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা কৃষক মানুষ কৃষি কাজই আমাদের পেশা। এখন এভাবে আমাদের জমি তলিয়ে গেলে আমরা ব্যাপক ক্ষতিরমুখে পড়ব। কৃষক জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, আমার প্রায় ৩শ শতক আমন ধানের জমি প্রায় এক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কয়েকদিন পানি স্থায়ী হলে সব ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। কৃষক কবির মিয়া জানান ৪শ শতক জায়গায় আমন চাষ করেছিলাম। আমার বেশিরভাগ জমিই এখন পানির নিচে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তজুমদ্দিন উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বলেন, টানা বৃষ্টিতে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর আমন ধানের খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ২৪০ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।তবে বর্তমানে বিভিন্ন খাল দিয়ে পানি নিস্কাশন হচ্ছে। এছাড়াও প্রায় ৭০% জমিতে বন্য সহনশীল ব্রি ধান-৫২ আবাদ হওয়ায় রোপা আমনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কিছুটা কম হবে বলে আশা করা যায়।ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।