sliderশিরোনামসুস্থ থাকুন

জুলাই বিপ্লবে আহত বাবুকে নেয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড

জুলাই বিপ্লবে আহত মোহাম্মদ বাবুকে (৩৬) আজ শনিবার থাইল্যান্ড পাঠানো হচ্ছে। বাবু মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে। কাজ করতেন নয়াপল্টনের ছাপাখানায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যায় ছাপাখানা। কিন্তু বাসায় বসে থাকেননি তিনি। জড়িয়ে পড়েন স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। শনির আখড়ায় বাসা হওয়ায় এ এলাকায় প্রতিদিন আন্দোলন করতেন। ২০ জুলাই সকালের দিকে গলি থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান রাস্তায় চলে যান। এ সময় হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দিচ্ছিলো বিজিবি। হঠাৎ করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু ৫-৬ হাত দূরে ছিটকে পড়েন। পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে রাখে। রক্ত দিয়ে ভিজে যায় রাস্তা। পরিচিত একজন তার বোনকে ফোন দিয়ে আসতে বলে। বোন বাবুর চার বন্ধুসহ ভাইকে উদ্ধার করতে আসেন। কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকে বাবু। ৫-৬ ঘণ্টা পর বোনের জামাই এসে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। এখানেও শুরু হয় বিড়ম্বনা। কেন হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে? এ অভিযোগে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়। এদিকে রক্তশুণ্য হয়ে বাবু মৃতপ্রায়।

মুক্তিযোদ্ধা বাবা চিকিৎসার সাথে জড়িতদের পায়ে পড়েন। তাতে চিকিৎসকদের মন নরম হয়। রাজি হন চিকিৎসা দিতে।

কিন্তু মেয়ে তো হাজতে বন্দী। তাকে মুক্ত করতে থানায় ছুটে যান মুজিবুর রহমান কিন্তু পুলিশ তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। পরে রাতে পুলিশ ফোন করে স্বামীকে চার হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলে। ধারদেনা করে চার হাজার টাকা দিয়ে থানা থেকে মুক্ত হন বাবুর বোন। কিন্তু মুক্তি মেলে না বন্ধুদের। তাদের পাঠানো হয় কারাগারে।

গুলি বাবুর পেটের নিচের অংশ দিয়ে ঢুকে কোমরের পিছন দিয়ে বের হয়ে গেলে খাদ্যনালী, মুত্রথলি, কোমরের হাড় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়।

মুগদা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা তার পেটে দুবার অপারেশন করেন। তার খাদ্যনালীর অনেকাংশ কেটে ফেলতে হয়। বাকি অংশ পেটে ফুটো করে আলাদা করে মলত্যাগের রাস্তা বানানো হয়। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। পরে সেপ্টেম্বর মাসে তাকে বিএমএমইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসায় কিছু উন্নতি হলেও একদিন খাদ্যনালী নতুন করে বানানো মলত্যাগের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসে। এতে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দেয় দেশের বাইরে পাঠানোর। ১৫ দিন আগে থাইল্যান্ডের চিকিৎসক এসে বাবুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা তাকে থাইল্যান্ডে নেয়ার সিদ্ধান্ত দেন।

মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হলে তিনি দ্রুত বাবুকে থাইল্যান্ডে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তার চিকিৎসায় এক কোটি টাকা খরচ হবে। তবে তা আরো বাড়তে পারে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশে আমরা বাবুকে দ্রুত বিদেশে নেয়ার ব্যবস্থা করি। শুক্রবার তার টিকেট পাওয়া গেছে। শনিবার সকাল ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে বাবুকে। ইতোমধ্যে গণবিপ্লবে আহত আরো চারজন এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বাবুর সাথে থাইল্যান্ড যাচ্ছে তার বোন সুবর্ণা। তিনি জানান, আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় সরকার খুব আন্তরিক। আমরা চিন্তাও করতে পারিনি বাবুকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড নেয়া হবে। তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button