sliderআন্তর্জাতিক সংবাদশিরোনাম

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের শেষকৃত্য আজ

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে মঙ্গলবার (১২ জুলাই) তার নিজ বাসভবনে। সোমবার (১১ জুলাই) প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। শুক্রবার (৮ জুলাই) শহর নারায় নির্বাচনী প্রচারণার অনুষ্ঠানে ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারান ৬৭ বছর বয়সী শিনজো আবে।
সম্প্রচার মাধ্যম এনএনএন জানিয়েছে, টোকিওতে তার পরিবার ও আবের সহযোগীরা ছোট পরিসরে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করবেন। আবের মরদেহ বহনকারী গাড়িটি শেষবারের মতো বিদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও সংসদ ভবনের পাশ দিয়ে নেওয়া হবে।
জাপানে সবচেয়ে বেশি দিন প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা শিনজো আবে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে টোকিওর সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। এই রাজনীতিক ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করার পাশাপাশি জাপানকে আবারও বিশ্বশক্তিতে পরিণত করার পথে অনেকটা অগ্রসর হয়েছিলেন।
আবে ২০২০ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলেও ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) তার প্রভাব বিদ্যমান। দলটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখনো তারই নিয়ন্ত্রণে। আবের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা রবিবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে।


প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের সবচেয়ে তরুণ প্রধানমন্ত্রী: কোবে স্টিল কোম্পানির এক সময়ের কর্মকর্তা আবে ২০০৬ সালে দলের সভাপতির দায়িত্ব পান এবং সেই সূত্রেই প্রথমবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন। সেসময় তার বয়স ছিল ৫২ বছর; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপান আর এত কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী দেখেনি। অবশ্য সেবার এক বছর পরই স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করতে হয়েছিল তাকে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আবের দল জয়ী হওয়ার পর আবারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। দুই বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ‘আবেনোমিক্স’ বা ‘আবেতত্ত্ব’ দেশটির অর্থনীতিকে আরো বেশি চাঙ্গা করবে বলে ফের দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি ক্ষমতায় আসেন।
তারপর উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগত আগ্রাসী ভাব, দেশের অর্থনৈতিতে ধস, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট নিয়ে জনগণের অসন্তোষে আবের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী হয়ে পড়লে ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় ফেরেন।
বিশ্ব জুড়ে আবে বেশি পরিচিত ছিলেন তার সিগনেচার তত্ত্ব ‘আবেনোমিক্সের’ জন্য, এর মাধ্যমে তিনি জাপানের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছিলেন। কয়েক দশক ধরে সামরিক খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে জাপানের মুখচোরা ভাবেরও অবসান ঘটেছিল আবের হাত ধরে। তিনি ওই খাতে ব্যয় বাড়িয়ে সামরিক সক্ষমতার বিকাশে পদক্ষেপ নেন।
তার আমলেই জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম দেশের বাইরে যুদ্ধ করার এবং মিত্র কোনো দেশ আক্রমণের শিকার হলে তাদের সুরক্ষায় সেনা পাঠানোর বিষয়টি অনুমোদন করে। আবে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের লেখা জাপানের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুচ্ছেদ বদলে জাপানের সেলফ ডিফেন্স ফোর্সকে আক্রমণাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একটি পরিপূর্ণ সেনাবাহিনীতে রূপান্তরে তার দীর্ঘদিনের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হন।
টোকিওতে অলিম্পিক গেইমস নিয়ে আসার মূল কারিগরও ছিলেন তিনি। কোভিডের কারণে ওই গেমস ২০২০ সালের বদলে ২০২১ সালে হয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখন আবে আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন না। স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের মাঝামাঝিই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন তিনি।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম, বেড়ে ওঠা: ১৯৫৪ সালের সেপ্টেম্বরে টোকিওতে জন্ম নেওয়া আবের পরিবার আগে থেকেই জাপানের রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী। তার বাবা একসময় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নানা নবোসুকে কিশি ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। বাবার মৃত্যুর পর আবে ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো এলডিপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কয়েক দশক আগে পিয়ংইয়ংয়ের হাতে জাপানি নাগরিক অপহরণের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে শক্ত অবস্থান তাকে দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।
আবে সবসময় প্রতিবেশী চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চাইলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস তাতে নিয়মিতই বাগড়া দিত। ২০১৩ সালে আবে টোকিওর বিতর্কিত ইয়াসুকুনি মঠ পরিদর্শনে গিয়ে বেইজিং ও সিউলকে ক্ষেপিয়ে দেন। ইয়াসুকুনি মঠকে জাপানের অতীত সামরিক শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারতকে নিয়ে কোয়াড এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরে কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ অ্যাগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (সিপিটিপিপি) গঠন ও বিকাশেও আবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলেও রাজনীতি থেকে অবসর নেননি তিনি। কেবল দলের বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও প্রচারণাতেই নয়, সমসাময়িক বৈশ্বিক নানান বিষয় নিয়েও গণমাধ্যমে নিয়মিত বক্তব্য রেখেছেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর জাপানের টেলিভিশনে এক মন্তব্যে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী জাপানে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র রাখার বিষয়টি টোকিওকে ভেবে দেখতে বলেছিলেন। তার ওই বক্তব্য চীন ও অন্যদের ব্যাপক ক্ষুব্ধও করেছিল।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button