
আবু তালহা তোফায়েল : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুসলিম উম্মাহর আধ্যাত্মিক রাহবর শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী বলেন, মানুষের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু ও নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষার বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন যে যাদের ঈমান আছে তারা ধ্বংস থেকে রক্ষা পাবে। আর ঈমান বলা হয় যারা সৎ পথে চলবে এবং মানুষকে সৎ পথে চলার আহ্বান করবে, অসৎ পথ থেকে নিষেধ করবে।
যদি মানুষ ঈমানহারা হয় তাহলে নিশ্চয় সে ধ্বংস হবে, এটা আমার কথা না, স্বয়ং পবিত্র কুরানে সূরা আসরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উল্লেখ করেছেন।
আজ ০৭ নভেম্বর (শনিবার) সিলেটের জামিয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথ মাদ্রাসার দোয়া মাহফিলের প্রধান অতিথির বক্তব্যে জমিয়ত মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী এসব কথা বলেন।
কাসেমী আরও বলেন, মানুষের ২টি জীবন; ইহকালের জীবন ও পরকালের জীবন। ইহকালের জীবন হচ্ছে সঞ্চয় করার এবং ইহকালের জীবনটি পরকালের তুলনায় খুব ছোট্ট জীবন, আর পরকালের জীবন হচ্ছে ভোগ করার।
ইহকালের জীবনে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী না চললে চতুষ্পদ প্রাণীর জীবন আর মানুষের জীবন এক হয়ে যায়। শুধু খানাপিনা তো চতুষ্পদ প্রাণীরাও করে, তুমি মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহর বিধানগুলো মেনে চলো, পরকালে চিরস্থায়ী সুখ আর শান্তি ভোগ করবে। আল্লাহ জান্নাত সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্যই। তাহলে কেনো জাহান্নামের পথ ও মতকে অনুসরণ করছ? যেখানে চির অশান্তি।
আল্লাহ এবং তার প্রেরিত কিতাব ও রাসূল মোহাম্মদ ইসলামের সর্বশেষ নবী জেনে বুঝে মানতে হবে, তার পথ অনুসরণ করতে হবে এবং “আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার” করতে হবে, তাহলেই প্রকৃত মুমিন হতে পারবো। আর যারা নবীকে শেষ নবী মানে না, তারা স্পষ্টভাবে কাফের। তাই কাদিয়ানীরা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী মানায় তাদেরকে কাফের বলা হয়। তারা মুসলিম বলে দাবী করলে তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হবে।
আল্লামা কাসেমী কওমি মাদ্রাসার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেন, এমন কোনো বিষয় নেই, যেখানে কোনো এক বিষয়ের উপর শিক্ষা দেওয়া হয়নি, সব বিষয়ের উপর শিক্ষা দেওয়া হয়৷ দেশ, জাতি ও ধর্মের প্রতিটি বস্তু কুরান ও হাদীসে আছে আর কুরান হাদিসের শিক্ষা দেওয়া হয় মাদ্রাসায়। আমাদের জেনারেল শিক্ষা সাধারণত কোনো এক সাবজেক্টের উপর কেউ পিএইচডি করে। তাতে পূর্ণাঙ্গে জীবন ব্যবস্থা থাকে না। হতে পারে কোনো এক বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেছেন কিন্তু সব সাবজেক্টের উপর শিক্ষা দেওয়া হয় মাদ্রাসা। শুধু তাই নয়, সন্তানের আমল, আখলাকসহ সবকিছু আদর্শভাবে গড়ে তোলে কওমি মাদ্রাসা।
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা হচ্ছে জান, মাল, ইজ্জত, আব্রু ও নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার শিক্ষা। তিনি বিবিসির এক প্রতিবেদনের রেফারেন্স টেনে বলেন মাদ্রাসা শিক্ষা নারীদের সম্ভ্রম রক্ষা করার শিক্ষা, জান, মাল, ইজ্জত ও আব্রু রক্ষার শিক্ষা। তাই সকলের দায়িত্ব এটা যে মাদ্রাসাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা। এটা আমাদের জাতীয় সম্পদ।
শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী বিশ্বনাথ জামিয়া মাদানিয়ায় আজ বুখারির প্রথম দরস দেন। তাই বুখারীর দরসে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, নবীর যুগ যারা পেয়েছেন এবং মুসলিম অবস্থায় সরাসরি নবী সাঃকে দেখার সুযোগ হয়েছে, তাদেরকে সাহাবী বলে, তাদের পরের যুগকে তাবেয়ীন এবং এর পরের যুগকে তবে তাবেয়ীন বলে। আর সাহাবী, তাবেয়ীন ও তবে তাবেয়ীনকে একত্রে সলফে সালেহীন বলা হয়। তাদেরকে যারা অনুসরণ ও অনুকরণ করে তাদেরকে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বলা হয়। আর সালফে সালেহীনের বাস্তব নমুনা হচ্ছে দারুল উলুম দেওবন্দ, তাই আমরা দারুল উলুম দেওবন্দকে ফলো করি, দারুল উলুম দেওবন্দের চেতমায় উজ্জীবিত হই।
তিনি আরও বলেন যে, হাদীসের দরসের প্রতিটি মুহুর্তে মুহুর্তে আল্লাহর হাবীব মহানবী হযরত মোহাম্মদ সা. এর দুরুদ পাঠ করা হয়, তাই হাদীসের দরসের চেয়ে মূল্যবান সময় ও যায়গা আর কোথাও হতে পারে না। হাদিসের দরস পর্যন্ত পৌঁছা অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার, আর যারা এই ভাগ্য পেয়েছেন, তারা যেনো হাদীসের দরসের যথাযথ মূল্যায়ন করেন।
কেননা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ২৩ বছরে যে কুরান নাজিল হয়েছে, এর বাস্তব বিশ্লেষণ হচ্ছে রাসুলের বাণী, কার্যক্রম, চলাফেরা ইত্যাদি। অর্থাৎ কুরানের সম্পূর্ণ বাস্তব বিশ্লেষণ হচ্ছে হাদীস৷