সিলেট প্রতিনিধি: বছর দশেক আগেও তিনি ছিলেন পাথর শ্রমিক। আর বাবা মোশাহিদ আলী ছিলেন একজন দিনমজুর। তবে দিন পাল্টে গেছে। বারকী শ্রমিক কালা মিয়া এখন সিলেটের শীর্ষ চোরাকারবারি। প্রতিদিন হাতে আসছে কাড়ি কাড়ি টাকা। সেই টাকায় এখন গোয়াইনঘাটের শীর্ষ ধনাঢ্যদের একজন তিনি। বলছি শীর্ষ চোরাচালানী কালা মিয়া ওরফে শ্যাম কালার কথা। তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাতিরখাল গ্রামের দিনমজুর মোশাহিদ আলীর ছেলে। পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে কালা দ্বিতীয়। জন্মসূত্রে দারিদ্রতার করাঘাতে বেড়ে উঠা কালা মিয়া এখন কলকাঠি নাড়েন সর্বত্র।
পশ্চিম জাফলং একটি সীমান্তবর্তী এলাকার চোরাচালান এখন তার নিয়ন্ত্রনে। যেখানে বারকী শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুবাধে কালা মিয়ার সখ্যতা গড়ে উঠে ছিঁচকে চোরাকারবারিদের সাথে। এই সখ্যতাই জীবনে পাল্টে দেয় কালা মিয়ার। ঘুরতে থাকে ভাগ্যের চাকা। প্রথমে নিজে উপস্থিত থেকে চোরাচালানকৃত মালামাল চোরাকারবারিদের কথামতো অন্য জায়গায় পৌঁছে দিতেন কালা। এখন শুধু কালা মিয়াই নয়। সহযোগী করেছেন নিজের স্ত্রীকে। বৌকে দিয়ে সিলেট জেলা ডিবি পুলিশের সাবেক ওসি রেফায়াত হোসেন ও পরে দায়িত্ব প্রাপ্ত ওসি ইকবালকে ধর্মস্থ ভাই বানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছেন নিজের আখের। তিনি ছিলেন জেলা ডিবি পুলিশের চোরাচালানের লাইনম্যান। এই পরিচয় পাওয়ার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। নিজেকে আড়ালে রেখে তার সহযোগী আলামিন, লনি মসাহিদকে দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে চোরাচালানের রাজত্ব।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, চোরাকারবারিদের মালামাল পরিবহনের পর কালা নিজেই ডিবি পুলিশের লাইনম্যান হয়ে গড়ে তোলে তার এক বিশাল চোরাকারবারি সিন্ডিকেট ও নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চোরাকারবারি হাতির পার গ্রামের জুবেরের মাধ্যমে অবাধে চালিয়ে যায় চোরাচালান বাণিজ্য, রাতারাতি হয়ে উঠে উপজেলা যুবলীগ নেতা। একটি পদ ভাগিয়ে নেয় টাকার বিনিমিয়ে। দলীয় সাইবোর্ড থাকায় ডিবির লাইনম্যান হিসাবে আরো সুবিধা জনক অবস্থানে পৌঁছায় শ্যামকালা।
সূত্রমতে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকের আগে এই কালার হাত ধরে গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে শত-শত অবৈধ অস্ত্র। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলংয়ের সোনারহাঁট সীমান্তকে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে কালা সিন্ডিকেট। ৫ আগষ্ট সরকার বদল হলে কালা মিয়া উরফে শ্যাম কালা যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া বাদ দিয়ে নিজে বিএনপির যুবদলের নেতা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে স্থানীয় একটি চক্রের সাথে ১০ লাখ টাকার একটি চুক্তি করেছে। যাতে তাকে উপজেলা যুবদলের কোন একটি পদ পাইয়ে দেওয়া হয়। কালা মিয়ার অবৈধ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলেই এলাকার লোকজনের উপর অত্যাচার শুরু করে কালা’র লাঠিয়াল বাহিনী।
এলাকার অনেকেই অভিযোগ করে বলেন যে বা যারাই কালা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তাদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে এই চক্র। কখনো ডিবি পুলিশ দিয়ে, নতুবা মিথ্যা মামলা দিয়ে, নতুবা তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, উপজেলার কুখ্যাত চোরাকারবারি কালা মিয়া ওরফে শ্যাম কালার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায় স্থানীয় প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কালা মিয়ার খুব অন্তরঙ্গ ছবি তার ফেসবুক প্রোফাইলের টাইমলাইনে এখনও এরির্পোট লেখা পর্যন্ত ঝুলছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন হচ্ছে একজন চিহ্নিত চোরাকারবারির সাথে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ছবি কিসের ইঙ্গিত বহন করে? সর্বশেষ জানা যায়, এই শ্যাম কালা ৫ আগষ্ট বৈসম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা মামলার একজন এজাহার ভুক্ত আসামী। এখন সে মামলার বাদীকে চাপ দিচ্ছে উক্ত মামলা থেকে তাকে বাদ দিতে।
অপর দিকে বিএনপির জেলা ও মহানগর ও কেন্দ্রের নির্দেশে এ পর্যন্ত ভারতীয় চিনি কান্ডের ঘটনায় বেশ কয়েককে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তাহলে এই কুখ্যাত চোরাকারবারী শ্যাম কালাকে যুবদলের সদস্য কিংবা পদ পাইয়ে দিতে কারা ইজারা নিয়েছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। যদিও ইতিমধ্যে উপজেলা দুই প্রভাবশালী নেতাকে আগেই দল থেকে বহিস্কার করে নিয়েছে জেলা বিএনপি।