শিবালয় প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের একটি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সুরভি দত্ত। তবে প্রায় ৭ বছর ধরে তার পরিবর্তে অফিস করেন তার বড় ভাই মানস রঞ্জন দত্ত (স্বপন দত্ত)। জাতীয় দিবস, বিভিন্ন সভা ও ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা পরিষদ পরিদর্শনে এলে সেদিন অফিসে আসেন সুরভি দত্ত। বোনের হয়ে বিভিন্ন সনদ ও পরিষদের কাগজপত্রে স্বাক্ষরও করেন ভাই মানস রঞ্জন দত্ত (স্বপন দত্ত)। অবাক করা এই ঘটনা মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের।
গত বৃহস্পতিবার, রোববার ও সর্বশেষ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের দায়িত্বে আছেন সুরভি দত্ত। প্রথমদিকে তিনি নিয়মিত অফিস করলেও বর্তমানে তিনি অফিসে আসেন না। জাতীয় দিবস, বিভিন্ন সভা ও ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা পরিষদ পরিদর্শনে এলে সেদিন অফিসে আসেন সুরভি দত্ত। অথচ তার ভাই মানস রঞ্জন দত্ত (স্বপন দত্ত) সচিব হিসেবে নিয়মিত অফিস করেন। পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সকল ধরনের কাজ করছেন, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদে কর্মচারীদের হাজিরা খাতাতেও স্বাক্ষর করতে দেখা যায় তাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউপি সদস্য বলেন, আমাদের সচিব সুরভী দত্ত হলেও অফিস করেন তার বড় ভাই মানস রঞ্জন দত্ত (স্বপন দত্ত)। মাঝে মধ্যে সুরভি দত্ত অফিসে আসেন। উপজেলা থেকে কর্মকর্তারা আসলে ওই দিন তিনি (সুরভি) অফিসে আসেন। তাছাড়া সব সময় মানস রঞ্জন দত্তই সচিবের কাজ করেন। গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভুট্টো বলেন, আমরা ইউনিয়ন পরিষদে কোনো কাজে গেলে স্বপন দত্তের কাছেই যাই। তাকে সব সময় অফিসে পাওয়া যায়।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ডেগিরচর এলাকার সোবাহান মোল্লা বলেন, চাকরি তার বোনের হলেও স্বপন দাদাকেই বেশি পাওয়া যায়। দাদা যখন চাপে পড়েন তখন দিদি আসেন। আমি যতবার পরিষদে গিয়েছি দাদাকেই পেয়েছি।
এ বিষয়ে সচিবের বড় ভাই মানস রঞ্জন দত্ত (স্বপন দত্ত) বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে তার উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। সচিব সুরভি দত্ত আমার ছোট বোন। তার কাজ অনেক বেশি, তাই বোনকে সাহায্য করি। চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন তাকে সাহায্য করার জন্য।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের সচিব সুরভি দত্ত বলেন, আমার কাজ অনেক বেশি, তাই চেয়ারম্যান আমার দাদাকে সহযোগী হিসেবে কাজ করার জন্য বলেছেন। চেয়ারম্যান আমার দাদাকে তার উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি সবসময় অফিসে আসি। শুধু বৃহস্পতিবার কালী মন্দিরে গিয়েছিলাম, আর আমার নাতী অসুস্থ এজন্য রোববার ও সোমবার অফিসে যেতে দেরি হয়েছে।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিন মোল্লা বলেন, আমি তাকে আমার উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। আমার ইউনিয়ন সব সময় প্রথম হয়। সচিবের কাজ অনেক বেশি, তাই সচিবের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন স্বপন।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক (উপসচিব) সানজিদা জেসমিন বলেন, আপনার কাছ থেকে বিষয়টা জানতে পারলাম, আমি এই বিষয়ে তদন্ত করবো। যদি ঘটনাটি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।