sliderস্থানীয়

ঘিওরে নানা আয়োজনে তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরকে স্মরণ

স্মৃতি সুরক্ষায় যাদুঘর, ভাস্কর্য্য ও রেললাইনের দাবি

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের ঘিওরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সংহতি মানববন্ধন, স্মৃতিচারণ সভা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (১৩ আগস্ট) বেলা ১১ টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওর উপজেলাধীন জোকা এলাকায় (দূর্ঘটনা কবলিত স্থানে) এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় স্মৃতিচারণ সভা শেষে স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বৃক্ষরোপণ করা হয়। পরে বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদের গণকেন্দ্র পাঠাগারে আলোচনা সভা, শিশু শিক্ষার্থীদের চিত্রাঙ্কর প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।

মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব, বারসিক, ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রেললাইন বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটি, তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর স্মৃতি পরিষদ, রেইনবো থিয়েটার, আলোর পথ, কবি নজরুল-প্রমীলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, তারুণ্য, কাকজোড় গোল্ডেন স্পোর্টিং ক্লাবসহ নানা সংগঠন এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করে।

মানববন্ধনে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অতীন্দ্র চক্রবর্তী বিপ্লবের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ, প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি গাজী ওয়াজেদ আলম, তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিপন আনসারী, ঘিওর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাম প্রসাদ সরকার দীপু, বারসিকের জেলা সমন্বয়কারী বিমল রায়, হীরালাল সেন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, রেইবো থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক গিনি আলম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সম্পাদক আতোয়ার রহমান তোহা, উন্নয়নকর্মী মো. নজরুল ইসলাম, বারসিক কর্মকর্তা সুবির কুমার সরকার, তারুণ্য যুব সংঘের অনিক রাজবংশী, আলোর পথের সভাপতি মাইকেল এম আকাশসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

স্মরণ সভায় বক্তারা, স্মৃতিফলক স্থানে তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরের ভাস্কর্য নির্মাণ, ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়ায় রেললাইন নির্মাণ, মহাসড়ক চার লেন উন্নীতকরণ ও মহাসড়কে দুর্ঘটনারোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

উল্লেখ্য যে, চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশফাক মিশুক মুনীরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১১ সালের এই দিনে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারা নিহত হন। তাদের সাথে আরো তিনজন নিহত হন। ওই তিনজন হলেন চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল। তারেক মাসুদ তার সহধর্মিণী ক্যাথরিন মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ নয় সদস্যের একটি দল নতুন সিনেমা ‘কাগজের ফুল’-এর লোকেশন দেখতে মানিকগঞ্জে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন ‘মাটির ময়না’র পরিচালক তারেক মাসুদ। ১৯৮৯ সালে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে ‘আদম সুরত’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন তারেক মাসুদ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ১৯৯৫ সালে তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’ ও ‘মুক্তির কথা’ (১৯৯৬) প্রশংসিত হয় আন্তজাতিক অঙ্গনেও। এরপর ২০০২ সালে তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ দেশের চলচ্চিত্রকে নিয়ে যায় আন্তজাতিক অঙ্গনে। ক্যামেরা ‘ডিরেক্টর’ হিসেবে কাজ করে যেসব বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আশফাক মিশুক মুনীর ছিলেন অন্যতম। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আশফাক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসির ভিডিও গ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সবার কাছে মিশুক মুনীর নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। তারেক মাসুদের সিনেমা ‘রানওয়ে’র প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন তিনি। নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তাদের দু’জনকে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে সরকার। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরকে বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনার পর ১৪ আগস্ট মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল চালক জামিরকে আটক করে। ঘিওর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের চালক জামির হোসেনকে একমাত্র আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের আট মাস পর মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি তারিখে ঘোষিত রাতে বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে আদেশ দেন। রায়ের পর জামির হোসেনকে প্রথমে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার ও পরবর্তীতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল। ২০২০ সালের ১ আগস্ট বাসচালক জামির হোসেন (৬০) শহীদ সোহরাওয়ার্দী হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে বন্দী অবস্থায় মারা যান।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button