ধুলিস্যাৎ হয়ে গেলো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলকে ২ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে খুলনার সঙ্গী হলো রাজশাহী রয়্যালস। ২২ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললেন আন্দ্রে রাসেল। এর মধ্যে ছক্কা মেরেছেন তিনি ৭টি। বাউন্ডারি ২টি। অর্থ্যাৎ ৫০ রানই এসেছে তার বাউন্ডারি আর ছক্কা থেকে। ২০তম ওভারের তৃতীয় বলকে ছক্কা পরিণত করেই রাজশাহীকে ফাইনালে তুলে দেন আন্দ্রে রাসেল।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৩ ওভারে ২২ রানে ওপেনার জিয়াউর রহমানের উইকেট হারায় চট্টগ্রাম।
ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন নিয়ে উদ্বোধনীতে খেলতে নামেন জিয়াউর রহমান। ক্রিস গেইলের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি জাতীয় দলে ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া দেশের এ তারকা অলরাউন্ডার। পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ইরফানের করা বলটি জিয়ার ব্যাটে লেগে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। ১২ বলে ৬ রানে ফেরেন জিয়া।
তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে গেইলের সঙ্গে ২৩ রানের জুটি গড়ে সাজঘরে ফেরেন ইমরুল কায়েস। জিয়া-ইমরুল ফিরলেও ব্যাটিং তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন গেইল। মাত্র ১৮ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় বিপিএল চলতি আসরের চতুর্থ ম্যাচে প্রথম ফিফটি তুলে নেন চট্টগ্রামের এ ক্যারিবীয় ওপেনার।
তবে ফিফটির পর নিজের ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি গেইল। আফিফ হোসেনের করা ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান গেইল। ঠিক পরের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বিভ্রান্ত হন। তার স্ট্যাম্প ভেঙে যায়। ২৪ বলে ৫টি ছক্কা আর ৬টি চারের সাহায্যে ৬০ রান করে ফেনের গেইল।
২ উইকেটে ৯৭ রান করা চট্টগ্রাম এরপর খেই হারিয়ে ফেলে। এরপর মাত্র ২৭ রানের ব্যবধানে গেইল-মাহমুদউল্লাহ-নুরুল হাসান সোহান এবং চাঁদউইক ওয়ালটনের উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে যায় চট্টগ্রাম।
দলীয় ৯৭ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে গেইল আউট হওয়ার পর দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সাজঘরে ফেরার আগে মাত্র ১৭ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৩ রান করে ফেরেন রিয়াদ।
শেষদিকে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একাই প্রতিরোধ গড়েন চট্টগ্রামের শ্রীলংকান ক্রিকেটার অ্যাশলে গুনারত্নে। ইনিংস শেষ হওয়ার ৭ বল আগে সাজঘরে ফেরার আগে ২৫ বলে ৩১ রান করেন তিনি। ৯ উইকেটে ১৬৪ রানে থামে চট্টগ্রাম।
রাজশাহীর হয়ে দুটি করে উইকেট নেন দলটির দুই পাকিস্তানি বোলার মোহাম্মদ ইরফান ও মোহাম্মদ নওয়াজ।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ১৬৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৩৪ রানে আফিফ হোসেন, লিটন কুমার দাস ও অলক কাপালির উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় রাজশাহী। এরপর চতুর্থ উইকেটে শোয়েব মালিকের সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি গড়েন ইরফান শুক্কর। ৩ উইকেটে ৮০ রান করা রাজশাহী। এরপর আবারও নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারায়।
ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্দ্রে রাসেল যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখন রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৪০ বলে ৮৩ রান। ব্যাটিংয়ে নেমে উইকেটে সেট হওয়ার আগেই দলকে জয় উপহার দিতে তাণ্ডব শুরু করেন। জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৭৬ রান।
১৬তম ওভারে দুই ছক্কা আর এক চার হাঁকিয়ে রুবেল হোসেনের কাছ থেকে ১৯ রান আদায় করে নেন রাসেল ও মোহাম্মদ নওয়াজ। ঠিক পরের ওভারে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান নওয়াজ ছক্কা হাঁকিয়ে ওভার শুরু করলেও তৃতীয় বলে আউট হন। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ছক্কা হাঁকিয়ের পরের বলে আউট হন ফরহাদ রেজা।
জয়ের জন্য শেষ ১৮ বলে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৩৭ রান। চলতি বিপিএলে দুর্দান্ত বোলিং করা মেহেদী হাসান রানা ১৯তম ওভারে খরচ করেন ২৩ রান। তার বলে দুটি ছক্কা ও দুটি চার হাঁকান রাসেল। শেষ ৬ বলে জয়ের জন্য রাজশাহীর দরকার ছিল মাত্র ৮ রান।
গুনারত্নে প্রথম দুই বলে কোনো রান দেননি। তৃতীয় বলে দেন ওয়াইড। ঠিক পরের বলে নো বল দেন আর সেই বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন আন্দ্রে রাসেল। দলের জয়ে মাত্র ২২ বলে ৭টি দৃষ্টিনন্দন ছক্কা আর দুই চারের সাহায্যে অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন আন্দ্রে রাসেল।