
মো. দুলাল হোসেন,বাউফল : বিগত বছর গুলোতে ঘটে যাওয়া প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর,আইলা,নার্গিস, বুলবুল, আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে মৎস্য, কৃষি, সড়ক, বিদ্যুৎ, বনজ ও গ্রামীণ অবকাঠামোগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পটুয়াখালীর বাউফলে বেসরকারী হিসেব অনুযায়ী ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা ছুইছুই। বাউফলের বিভিন্ন দপ্তরে তথ্য নিম্নে তুলে ধরা হল:
উপজেলার কৃষি অফিস: উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস জানান, ২ হেক্টর আউশ বীজতলা ২.৫ হেক্টর তিল, ৩ হেক্টর কাঁচা মরিচ, শাকসবজি ৮০ হেক্টর, পান ২ হেক্টর, পেঁপে ২ হেক্টর, কলা ৩ হেক্টর এবং ৩ হেক্টর জমির আমসহ মোট ৪ কোটি ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা বন বিভাগ : উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান খান জানান, একটি ম্যানগ্রোভ নার্সারিসহ ৬ লাখ ১৩ হাজার ৩০০ চারা, রাস্তায় বাগানের ৮১ হাজার চারা ও ৪১ হাজার নার্সারি চারাসহ মোট ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৪ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ১৫ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৮ থেকে ১০ হাজার ব্যক্তি মালিকানাধিন বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
মৎস্য অফিস: উপজেলা সিনিয়ার মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম তালুকদার জানান, রেমালের প্রভাবে উপজেলার ৪ হাজার পুকুর, ৫০টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। ৭০ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা পানিতে ভেসে গেছে। এরফলে অবকাঠামোসহ মোট ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা পল্লীবিদ্যুৎ অফিস: পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাউফল জোনাল অফিসের ডিজিএম মজিবুর রহমান জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের ১৫টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে এবং ২০০ পয়েন্টে তার ছিঁড়ে গেছে। এছাড়াও ২০০ বেশি ইনসোলেটর বিনষ্ট হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব বিশ্বাস জানান, উপজেলায় ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধাপাকা ও টিনসেট ভবন সম্পূর্ণ বিধস্ত হয়েছে। আংশিক বিধস্ত হয়েছে ১ হাজার ১৩৪টি ভবন। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ধূলিয়া, চন্দ্রদ্বীপ ও নাজিরপুর ইউনিয়নে ৮ কিলোমিটার কাঁচা সড়কসহ মোট ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক আলকাস মোল্লা জানান, তেঁতুলিয়া নদী বেষ্টিত তার ইউনিয়নের ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে খানকা বাজার থেকে দক্ষিণে ছালাম হাওলাদার বাড়ি পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার, দিয়ারা কচুয়া খেয়া ঘাট থেকে উত্তরে স্লুইস গেট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, চর নিমদি খেয়াঘাট থেকে দক্ষিণে ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও চরব্যারেট ফারুক খানের বাড়ি থেকে পশ্চিমে সেকান্দার দর্জির বাড়ি পর্যন্ত একটি কাঁচা রাস্তা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে।
বাউফল উপজেলা প্রকৌশলী মানিক হোসেন জানান, উপজেলায় মোট পাকা ও কাঁচা মিলিয়ে ১৬৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সড়কগুলো পুনঃনির্মাণ ও মেরামত করতে মোট ১০৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালে তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী কালাইয়া টু মমিনপুর জিসিআর সড়ক কাম বেড়িবাঁধটি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সড়কের ৮টি পয়েন্টে ভেঙ্গে গেছে।
এছাড়াও রেমালের প্রভাবে চন্দ্রদ্বীপ, কালাইয়া, নাজিরপুর, কেশবপুর, ধুলিয়া, কাছিপাড়া, আদাবাড়িয়া, দাশপাড়া, বাউফল পৌর এলাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে। অধিকাংশ পানিবন্দি মানুষের কাছে এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি। বেড়িবাঁধের বাইরে এলাকাগুলোর পানি নেমে গেলে ভিতরের এলাকগুলোর পানি বেড় হতে না পারায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী বলেন, প্রাথমিকভাব ১ হাজার ২০০ কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক এবং সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার তিন হাজার পরিবারের মধ্যে সরকারী ভাবে শুকনো খাবার, ১০ কেজি করে চাল, ডাল, তৈল, আলু, পিঁয়াজসহ ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সরকারের কাছে আরও চাহিদা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোসারেফ হোসেন খান বলেন, ঝড়ের দিন সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয়কৃত মানুষের মাঝে স্থানীয় এমপি আসম ফিরোজের নির্দেশে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হয়।
জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ.স.ম ফিরোজ এমপি বলেন, বাউফল উপজেলা সাগর উপকূলীয় হওয়ায় এখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকার অধিক ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলায় এলাকায় যে ধরণের সাহায্য প্রদান করবেন আশা করি আমার উপজেলায়ও একই ধরণের সাহায্য প্রদান করবেন। যাদের ঘর বিধস্ত হয়েছে তাদের মাঝে টিন বিতরণের জন্য তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে প্রায় ৯০০ ব্যান্ডেল ডেউটিন মওজুদ রয়েছে। সেখান থেকে অধিক ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ডেউটিন বিতরণ করা হবে।