শিবালয় প্রতিনিধি: ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে গেছেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার দুইজন নির্বাহী প্রকৌশলী। একজন সদ্য সাবেক বেল্লাল হোসেন এবং বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন। এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হলেও তেমন অগ্রগতি নেই। অদৃশ্য কারণেই মামলার কার্যক্রম কচ্ছপগতিতে চলছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ পৌরসভার সদ্য সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে শহরের বুকে গড়ে তুলেছেন আবাসিক এবং বাণিজ্যিক দুইটি ভবন। শহরের লুঙ্গিপট্টি এলাকায় একটি ৫ তলা ভবন এবং শহরের শহিদ রফিক সড়কে ৩তলা বাণিজ্যিক ভবন। এই দুইটি ভবনের বর্তমান বাজার দর প্রায় শতকোটি টাকা।
এছাড়া পৌরসভার চরহিজুলী গ্রামে রয়েছে ১৯০ শতাংশের বিশাল একটি বাগান। এদিকে বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আ ন ম গিয়াস উদ্দিন মানিকগঞ্জ স্টেডিয়ামে সড়কের পাশেই ৮ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। এছাড়া তিনি ঢাকার সাভারে একটি বাড়ি করেছেন এবং তার গ্রামের এলাকায় রয়েছে অসংখ্য কৃষিজমি। তিনি গত কয়কে মাস নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়ে ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি।
পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ না করে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুদকে একটি মামলা রয়েছে এই দুই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। দুদকের ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে মানিকগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পের ৪টি রাস্তার কাজ যথারীতি সম্পন্ন না করে অতিরিক্ত ৬০ লাখ ২০ হাজার ৮৪৪ দশমিক ৯৫ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ঠিকাদার এবং সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন এবং বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন।
পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক একেএম তানভীর আহমেদ বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ১৯ মে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিসহ ৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি হচ্ছেন- মের্সাস এমএ ইঞ্জিনিয়ারিং মেসার্স হোসেন কনস্ট্রাকশন (জেভির) ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রতিনিধি মো. মোক্তার হোসেন, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন,বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আনম গিয়াস উদ্দিন, উপসহকারী মামুন আল হায়াত। বর্তমানে মামলার আসামি বেল্লাল হোসেন চলতি বছরের অক্টোবর মাসে অবসরে গেছেন। গিয়াস উদ্দিন বর্তমানে মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন। মামুন আল হায়াত বদলি হয়েছেন।
এছাড়াও নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেন মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসাইন কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম। ওই সময় পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিল ছাড়ার কথা বলে ২০ লাখ টাকার ঘুস চাওয়ার অভিযোগে তুলে ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম। চূড়ান্ত বিল নিতে বাধ্য হয়ে তখন ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেনের রুপালী ব্যাংক মানিকগঞ্জ শাখায় ১০ লাখ টাকা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। .
মানিকগঞ্জ পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইঞ্জিনিয়ার বেল্লাল টাকা ছাড়া কোনো কিছু বুঝত না। ঠিকাদাররা তাকে টাকা না দিলে ফাইল আটকে দিতেন। তিনি ঘুস দুর্নীতির মাধ্যমে মানিকগঞ্জ শহরে একটি ৫ তলা ও একটি ৩ তলা ভবন করেছেন। এছাড়া তার গ্রামের বাড়িতে রয়েছে বিশাল একটি বাগান। সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, ওই মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। গ্রামের বাগান টাকার কারণে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। শহরের দুইটি ভবনের কথা স্বীকার করে তিনি বলে এখানে আরও পার্টনার রয়েছে।
বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পৌরসভায় একাধিকবার গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলার কথা শুনেছি। আদালতে মামলা চলছে। সাভারে আমার কোনো বাড়ি নেই। তবে মানিকগঞ্জ শহরের ৭ শতাংশ জায়গার কথা তিনি স্বীকার করে বলেন, ভাই মানুষ বিপদে পড়লে কতজন কতকিছু বলে। পাবলিক প্রসিকিউটর (দুদক) অ্যাডভোকেট আজিজুল্লাহ বলেন, মাসখানেক আগে একটি এজাহারের কপি পেয়েছি। এখনো তেমন অগ্রগতি দেখছি না।