
ধর্ষকসহ ৬ সালিসকারীর বিরুদ্ধে মামলা
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীর (১৪) ইজ্জতের মূল্য ৪০ হাজার টাকা নির্ধারন করলেন স্থানীয় ইউ.পি চেয়ারম্যান ও সমাজপতিরা। অবশেষে ধর্ষকসহ ৬ সালিসকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন মেয়ের মামা সিরাজুল ইসলাম। মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েটি উপজেলা সদরের ধলেশ্বরী নদীর উত্তরপাড় গ্রামের চাঁন মিয়া (চান্দুর) মেয়ে। চাঁন মিয়া বাস গাড়ির কন্ট্রাক্টর আর মা দেড় বছর ধরে বিদেশে থাকেন। মেয়েটি থাকে তার নানীর কাছে।
কিশোরীটির পরিবার ও কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহার কয়েক দিন আগে মেয়েটি প্রতিবেশী কয়েকজন শিশুর সঙ্গে বাড়ির পাশের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছিল। এ সময় গ্রামের দুলাল মিয়া নামের এক ব্যক্তি মেয়েটিকে ডেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর ঘরের ভেতর নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন তিনি। ১০ সেপ্টেম্বর মেয়েটি বাড়ির লোকজনকে বিষয়টি জানায়। এরপর শিশুটির পরিবারের লোকজন স্থানীয় ও গ্রামের মাতবরদের বিষয়টি জানান। গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে গ্রামের মাতবর ফজল খানের বাড়িতে সালিস বৈঠক বসে। সালিসে স্থানীয় মাতবর মহব্বত আলী, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম, ফজল খানসহ উভয় পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। দুপক্ষের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানার পর সেখানে অভিযুক্ত দুলাল মিয়াকে কান ধরে ওঠবস ও ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু শালিসের ৩ দিন পরও টাকা পায়নি কিশোরীর পরিবার। মাতব্বরদের ভয়ে মামলাও করেনি কিশোরীর পরিবার।
প্রতিবন্ধী কিশোরীর মামি জানায়, আমরা গরীব মানুষ। এলাকার মাতব্বরদের অমান্য করে থানায় যাই নাই। তাই বিচারের আশায় মাতব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। মাতব্বরা দুলালকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। জড়িমানার টাকা দুই কিস্তিতে দিবে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে। কিন্তু সালিশের ৩ দিন পরেও আমরা কোন টাকা পাই নাই। মেয়েটির স্বজনেরা আরো বলেন, ঘটনা জানার পর মহব্বত আলীসহ গ্রামের মাতবরদের কাছে যান তাঁরা। মাতবরেরা সালিসে বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দেন। এ কারণে তাঁরা আইনের আশ্রয় নেননি। মেয়েটির দাদি বলেন, ‘সালিসে আমার নাতনির ইজ্জতের দাম ৪০ হাজার ট্যাহা করা অয়। হেই ট্যাহাও পাই নাই।’
মঙ্গলবার দুপুরে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত দুলাল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। সালিসের পর থেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি অন্যত্র গেছেন বলে প্রতিবেশীরা জানান। গ্রামের মাতবর ফজল খান বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আমার বাড়িতে সালিস বসায়। তাই সালিসে না থেকে পারিনি। কিন্তু আমি কোনো রায় দিই নাই।’
মহব্বত আলী বলেন, ‘সালিসে আমি ছিলাম। কিন্তু আমি কোনো রায় দিই নাই। সালিসে শাস্তি ও জরিমানা করার কথা শুনেছি।’
ঘিওর ইউ.পি চেয়ারম্যান মোঃ অহিদুল ইসলাম টুটুল জানান, উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে এলাকার মাতব্বরদের নিয়ে বসেছিলাম। ঘটনার কোন সত্যতা পাইনি। আমি কোন রায়ও দেই নি। বিচারে জরিমানার টাকা তাঁর হাতে থাকার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ঘিওর থানার অফিসার ইনচাজর্ (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার সাথে জড়িত সালিসকারী ও ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে গ্রাম্য মাতব্বদের সমাধান দেওয়ার এখতিয়ার নেই। দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।