
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে পাটের বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে পাট চাষীদের মুখে। বাজারে নতুন পাট বিক্রির শুরুতেই বাড়তি দাম পেয়ে কৃষকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। পুরাতন ঐতিহ্য ফিরে এসেছে পাট শিল্পে। পাট শিল্পের সাথে জড়িত হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হচ্ছে। সেইসঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় পাট উৎপাদন ও পলিথিন সিন্ডিকেটের পরিবর্তে পাটের ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আইন পাস করেছে সরকার। ফলে দেশের উৎপাদিত সার, চাল, চিনি, সিমেন্ট ও ফসলের বীজসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বাজারজাত করতে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে ইতোমধ্যে আইন পাস করা হয়েছে। বর্তমান সরকার পাটের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে বদ্ধপরিকর। ভাল দাম পাওয়ায় এবার পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো, শুকানো এবং বিক্রির কাজে আনন্দ উল্লাসে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কৃষকরা। ফলে পাট চাষীরা তাদের উৎপাদিত নতুন পাটের বাজার দর ভাল পাবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এ আশায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে ঘিওরের পাট চাষীরা।ঘিওরে একসময় দেশের প্রথম সারির অর্থকরি ফসল সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের ব্যাপক আবাদ হতো। গ্রামীণ জনপদে পাটের মান অত্যন্ত ভাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর চাহিদা ছিল অনেক। মানিকগঞ্জের ঘিওর ও দৌলতপুর হাটবাজার ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ি সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাট চালান হতো।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেপারীরা এসে বিভিন্ন মোকাম থেকে পাট কিনে নিয়ে যেত। এককথায় মানিকগঞ্জের পাটের ব্যাপক কদর ছিল। এ অঞ্চলের জলবায়ু পাট চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। নদী-নালা, খাল-বিলের পানিতে পাট জাগ দেয়া, পাটের আঁশ এবং রং ভাল হওয়ায় তুলনামূলকভাবে পাটের চাহিদা ভালো। দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে ঘিওর-দৌলতপুরে পাটের দাম তুলনামূলকভাবে প্রতি মণে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। বিগত বছরগুলোতে পাট আবাদে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদিত খরচ বৃদ্ধি সেইসাথে উৎপাদিত পাটের বাজারে ভাল দর না পাওয়ায় এবং অন্যান্য ফসলের আবাদ করে পাটের তুলনায় লাভবান হওয়ায় কৃষকরা পাটের আবাদ ভুলতে বসেছিল।
বর্তমান সরকার দেশে পাটের ব্যবহার নিশ্চিত ও আবাদের প্রতি গুরুত্ব দেয়ায় পাটের বাজার দর ভাল অবস্থানে পৌঁছেছে। তাই এলাকার পাট চাষীরা এ বছর পাটের আবাদে ঝুঁকে পড়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় পাটের আবাদ করে চাষিরা খুশি।ঘিওর উপজেলার পাট চাষি বড় কৃষ্ণপুর গ্রামের আজাহার জানান, জমিতে ভুট্টা তুলে পাট চাষীর জন্য ৪ বিঘা জমিতে চাষ দিয়ে রেখেছিলাম। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় জমিতে জো আসার সাথে সাথেই পাটের বীজ রোপণ করেছিলাম। মাটিতে জো আসায় চারাগুলো ভাল হয়। নিড়ানী, পরিযর্চা করায় পাট ক্ষেতের চেহারা ভাল হয়। নিড়ানী, আগাছা দমণ, সার, বীজ, কীটনাশক ও পাট কাটা-ধোয়াসহ প্রতি বিষা পাটে খরচ হয়েছে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা পাটের বাজার মূল্য ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। গত বছর পাট চাষ করে ভাল বাজার দর পেয়েছিলাম। তাই এবারও আবাদ করছি। আশা করছি বাজার দর ভাল পাব।এভাবে বাজার দর থাকলে পুরনো ঐতিহ্য ও সুদিন ঘুরে আসবে পাট চাষীদের।
পাট ব্যবসায়ী মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ দেশী পাট ১৬৫০ টাকা থেকে ১৮৫০ টাকা এবং তোষা পাট ১৫শ থেকে ১৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার পাটের চাহিদা ভাল। বাজার দর ও বিভিন্ন মিলে পাটের চাহিদা ব্যাপক থাকায় চাষীদের পাশাপাশি পাট ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছে।বাজার দর এভাবে থাকলে আবারও পাট চাষে এলাকার কৃষকের আগ্রহ বাড়বে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার সার, চাল, চিনি, সিমেন্ট, ফসলের বীজসহ বিভিন্ন পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করায় সেইসাথে পাট চাষের ওপর গুরুত্ব দেয়ায় আবারও পাটের চাহিদা তুলনামূলক বেড়ে গেছে। পাট ও পাটজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে। সোনালি আঁশ আবারও তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আশরাফ উজ্জামান বলেন, বর্তমানে ঘিওরে ৪৪৩ হেঃ এবং তোষা ৪৩৬ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছিল দেশি ৩৫ হেঃ এবং তোষা ৩১৫ হেক্টর। আবহাওয়া এবং পরিবেশ অনুকূলে থাকায় পাটের আবাদ ব্যাপক হয়েছে। ফলন ভাল পাওয়ায় কৃষকও দামও ভাল পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পাটের সুদিন আসায় কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে।