
চলতি বছরের ২১ মার্চ সরকার মহোদয় শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই ঘোষণার মাত্র তিন মাস পরে বাংলাদেশ আবারো লোডশেডিং’র যুগে প্রবেশ করেছে, গোপনে নয় তাও আবার ঢোল-তবলা পিটিয়ে। খোদ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় লোড শেডিং হচ্ছে প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা করে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার অনুরোধও করেছেন হীরক রাজার দেশের মন্ত্রী আর উজীরগন। তেলের খরচ কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কারণ হিসেবে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিসহ সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াকে তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে বিভিন্ন দেশের উদাহরণও দিচ্ছে সরকার মহাশয়, যেমন – অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত তাদের জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু এসব দেশ তাদের জ্বালানিখাতকে সাশ্রয়ী করতে বছরের পর বছর ধরে মাস্টারপ্লান মোতাবেক কাজ করে আসছে।
আমাদের সরকার কী সেই পথে হেঁটেছে? মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর এক দশক পেরিয়ে গেছে; অথচ সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান কী করা হয়েছিল? সস্তা শ্রম ও সস্তা জ্বালানির (প্রাকৃতিক গ্যাস) উপর ভর করে বাংলাদেশের শিল্পায়ন এগিয়ে গেছে। অথচ নিজের পায়ে কুড়াল মারার মত করে সরকার হেঁটেছে উল্টো পথে। সমুদ্রে সস্তা দরের গ্যাস অনুসন্ধান না করে সরকার হেঁটেছে উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানির দিকে, শুধুমাত্র বেসরকারিখাতের গুটি কয়েক কোম্পানিকে সুবিধা দিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গ্যাসের সংকট মিটাতে কিছুটা হলেও এলএনজি আমদানি করতে হতো, কিন্তু একই সাথে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানও চালিয়ে যাওয়া আবশ্যিক ছিল বলে মনে করে এবি পার্টি। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বার বার এ বিষয়ে তাগাদা দিলেও সরকার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি। যদি সঠিক সময়ে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করা হত, তাহলে নিশ্চয়ই গ্যাসের নতুন উৎস পাওয়া যেত, বিশ্বব্যাপী যে সংকট চলছে সেটা মোকাবিলা করা সহজ হত।
রংপুর ও দিনাজপুরের পাঁচটি কয়লাখনিতে সাত হাজার ৮০৩ মিলিয়ন টন কয়লার মুজদ রয়েছে। বাংলাদেশের কয়লার মান দুনিয়ার যেকোন দেশের কয়লার চেয়ে উন্নত। দেশের ১ টন বিটুমিনাস কয়লার ‘প্রজ্জ্বলন ক্ষমতা’ বিদেশ থেকে আমদানি করা ২ টন কয়লার সমান। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য দেশের কয়লার চেয়ে দেশীয় কয়লার দামও বেশি। অথচ এই কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে ভারত, ইন্দোনেশিয়া থেকে নিম্ন মানের কয়লা আমদানী করা হচ্ছে, দলীয় লুটপাট জারী রাখার স্বার্থে, সেটা দেশ ও জাতির স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে হলেও।
সরকার প্রধান যখন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা এবং উৎপাদন কমানোর কথা বলছেন, তখন দেশবাসীর আর বুঝতে বাকী নেই সংকটের গভীরতা। সেই সংকটকে আরো গভীরে নিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার মাধ্যমে। চলতি অর্থ বছরের জন্য (২০২২-২৩) এই খাতে ৩২ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে বলে হিসাব কষে দেখিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান – সিপিডি। তাহলে বিষয়টা দাড়াচ্ছে এরকম যে – একদিকে আমজনতা লোডশেডিং এ কষ্ট করবে, অন্যদিকে বিদ্যুত কেন্দ্রের মালিকরা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও জনগণের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিবে – হীরক রাজার দেশে ডিজিটাল লুটপাট।
জনবিরোধী এই আইন এখনই রদ করার দাবী জানাচ্ছে এবি পার্টি। যে বিশেষ আইনের মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোগে দ্রুত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল লোডশেডিং সমস্যা নিরসনে, সেই লোডশেডিং আবারো ফিরে আসবে অথচ জনগণ অন্ধকারে কষ্ট পেয়েও টাকা দিবে, এমন জনবিরোধী আইন রহিত করতে হবে অনতিবিলম্বে। বিদ্যুতের লোডশেডিং এর পাশাপাশি দেশ আগে থেকেই চলছে ডলার সংকট, সেই সংকটের কারণে সরকার চাইলেও বেশি করে জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না বা পারবে না। এবি পার্টি সরকারকে সতর্ক করে দিচ্ছে, শ্রীলঙ্কার মত পরিস্থিতি ঠেকাতে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, না হয় অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকারের সাংসদ, মন্ত্রী ও আমলারা বিমানের ককপিটে করেও পালাতে পারবে না।