আবু তালহা তোফায়েল : বিশ্বব্যাপী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা মরণব্যধি করোনা ভাইরাস ব্যাপক আকার ধারণ করলে বাংলাদেশের জনসাধারণের জীবন রক্ষার্থে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাটে কর্মহীন মানুষ লকডাউনের কবলে পড়ে অনাহারে, অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছিল।
সবকটি পাথর কোয়ারী আগে থেকেই বন্ধ থাকায় শ্রমজীবি মানুষ ভীষণ বে-কায়দায় পড়ে যান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে নিজ ঘরে সেইফ থাকতে চেষ্টা চালিয়ে যান। ঘর বন্দি মানুষের দূর্ভোগ লাঘবে এই জনপদের গণমানুষের মূল্যবান রায়ে বার বার নির্বাচিত এমপি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জননেতা ইমরান আহমদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সরকারি সাহায্য বিতরণ শুরু হয়। সরকারি এ সব সাহায্য সহযোগিতা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যানগণের হাতে পৌছে দেয়া হয়। প্রটোকল অনুযায়ী এতে ভাইস চেয়ারম্যানের তেমন কোন হিস্যা থাকে না। কিন্তু জনতার বাধ ভাঙ্গা ভালোবাসায় সীক্ত উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জননেতা মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছের সরকারি অফিসে সকাল ০৯ টা থেকে অভূক্ত মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে। বাড়বেই বা না কেন? উনি উনার অফিসের দরজায় লিখে রেখেছেন “এই অফিস আপনাদের, এই অফিসে প্রবেশে করতে কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই”। এমনিতেই সাধারণ জনতার সাথে উনার গলায় গলায় ভাব। উনার পিতা মরহুম এম.এ. সামাদ কুটি মিয়া দীর্ঘ ২২ বৎসর ৫নং আলীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অত্যান্ত সুনামের সহিত পালন করেন।
জনসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ উনার বাবা মরহুম এম.এ সামাদ কুটি মিয়া সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ট চেয়ারম্যানের খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন। সেই হিসাবে বলা যায়, জনসেবায় হাতে খড়ি সেই ছোট্ট বেলা থেকেই। সুবিধা বঞ্চিত মানুষ মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছের কাছে এসে অকপটে মনের কথা বলতে পারে। সেই সমস্ত কর্মহীন অভূক্ত মানুষের জন্য কিছু করতে উনার মন সব সময় অস্থির থাকতো। কোন কিছু না দিয়ে কিংবা সরকারি সাহায্য যা এসেছিলো তা আমরা
চেয়ারম্যানগণের কাছে দিয়ে দিয়েছি, এ জাতীয় কথা বলে আর কতজনকে খালি হাতে ফেরানো যায়? উনি অন্তরের সবটুকু আবেগ উঝাড় করে কায়মনো বাক্যে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন এবং সমাজের বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা দাতা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে এই জনপদের দরিদ্র্ জনসাধারণের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বিনীত অনুরোধ করা শুরু করলেন।
মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠন থেকে উনার মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রী আসা শুরু হলো। উনি সবিনয়ে প্রত্যেক দাতাকে জানিয়ে দিলেন যে, আমার হাতে নগদ টাকা দেয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি কিংবা আপনার সংগঠন আল্লাহর ওয়াস্তে যত টাকা অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই সম্পূর্ণ টাকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী কিনে দিবেন। আমি প্যাকেট করে উপযুক্ত দরিদ্র মানুষের কাছে নিয়ে যাবো। সেই থেকে শুরু, উনার ডাকে সাড়া দিয়ে সর্ব প্রথম সীমান্তের আহ্বান পত্রিকার কর্তৃপক্ষকের পক্ষ থেকে ০৪ বস্ত চাউল দিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রায় ৬০,০০,০০০/- (ষাট লক্ষ) টাকার মতো ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি হলো:-
১। গোয়াইনঘাট প্রবাসী ট্রাস্ট
২। গোয়াইনঘাট প্রবাসী ঐক্য পরিষদ
৩। গোয়াইনঘাট প্রবাসী সমাজ কল্যাণ পরিষদ
৪। গোয়াইনঘাট উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ
৫। গোয়াইনঘাট ইমাম সমিতি
৬। গোয়াইনঘাট উদীয়মান তরুণ সংঘ
৭। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গোয়াইনঘাট উপজেলা
৮। বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ জেদ্দা মহানগরীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাওলানা বিলাল উদ্দিন
৯। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাওলানা এবাদুর রহমান
১০। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতী মাওলানা আব্দুন নুর
১১। মাওঃ গোলাম কিবরিয়া
১২। মাওঃ আতাউর রহমান
১৩। আমেরিকা প্রবাসী ইফতেখার আহমদ হেলাল
১৪। মরহুম এম.এ. সামাদ কুটি মিয়া চেয়ারম্যান স্মৃতি সংসদ
১৫। মাওঃ ইজ্জত উল্যাহ প্রমুখ। এছাড়াও
আঞ্চলিকভাবে ইউনিয়ন ভিত্তিক অনেক ব্যক্তি ও সংগঠন করোনা কালীন সময়ে দরিদ্র মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, ইবতেদায়ী মক্তবে ফ্যান, টেউটিন ও মাইকসহ শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এই সব ত্রাণ সামগ্রী বন্যা কালীন সময়ে ইঞ্জিল চালিত নৌকায় কিংবা গাড়ী যোগে অঞ্চলব্যাধে অসহায় দরিদ্র মানুষের হাতে পৌছে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব থেকে জনসাধারণকে বাঁচাতে হাতে নিয়েছেন জন সচেতনা মূলক একগুচ্ছ কর্মসূচী। গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে করোনা পজেটিভ রোগীদের লকডাউনে থাকা স্বজনদের খোঁজ খবর ও ত্রাণ সামগ্রী ব্যবস্থা করেন। করোনা মারা যাওয়া রোগীর দাফন-কাফন ও জানাযার নামাজের ইমামতি করে গোয়াইনঘাটে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এসব সাহায্যের প্রতিটির আপডেট সীমান্তের আহ্বান নামের পত্রিকাসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ডকুমেন্ট আকারে সংরক্ষিত রয়েছে।
ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে বাহ্ বাহ্ কুড়ানোর উদ্দেশ্য নয়, অনুদান দাতা ব্যক্তি কিংবা সংগঠন কর্তৃক বরাদ্দকৃত সেই সব ত্রাণ সামগ্রী যথাযথ মানুষের হাতে পৌছে দেয়া হচ্ছে কিনা সেই জন্য এইসব রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।
তাই এটা বলাই যায় মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ গোয়াইনঘাটবাসীর জন্য আর্শীবাদ স্বরূপ। ভাইস চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে ইচ্ছা থাকলে জনসেবা করা যায়, সেটা মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ৪নং লেঙ্গুঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, করোন মহামারী ও আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য সরকারি সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ প্রায় প্রতি সপ্তাহে কোন না কোন মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মানুষের দোয়ারে হাজির হতেন। সীমান্তের আহ্বান পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি মাওঃ আবুল হাসনাতের সাথে কথা হলে, তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর সময়ে ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাওঃ গোলাম আম্বিয়া কয়েছ যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। এর কয়েকটিতে আমি নিজেও সাথে ছিলাম। লাফনাউট বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুহসিন বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওঃ গোলাম আম্বিয়া কয়েছ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত উনি জনসেবায় নিজেকে সর্বাত্মক নিয়োজিত রেখেছেন।
.