আবদুলআউয়াল ঠাকুর: অনেকদিন পর বাংলাদেশে পাকিস্তানী পণ্য বোঝাই জাহাজ এসেছে। জাহাজটি নাকি সাবের হোসেন চৌধুরি এনেছিলেন । পাকিস্তানী জাহাজ বাংলাদেশে সমুদ্র সীমায় প্রবেশের পর থেকেই নানা কথায় ভরে উঠেছে । এই জাহাজে পণ্য- নাকি পারমাণবিক অস্ত্র এসেছে তা নিয়েও অনেকে কথা বলেছেন । কথা যাইহোক সেটি বিবেচনায় নিতে গেলে অন্য কথা । পাকিস্তারে সাথে বাংলদেশে ব্যবসা করতে সমস্যা কোথায় । বাংলাদেশে গত ১৫ বছর বা তারো বেশি সময় ভারতের সাথে যে বাণিজ্য হয়েছে তাতে ভরতীয় গাড়ী আমদানিথেকে শুরু করে বহূ পণ্যের বেলায় পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে । পাকিস্তানী পণ্য আসার সাথে সাথে যা পারমাণবিক অস্ত্রের ঘ্রাণ পেলেন তাদের শাধুবাদ জানাই । কারণ যদি সত্যি সেরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে ভারতের হাত থেকে বাঁচার অন্তত একটা মোক্ষম অস্ত্র পাওয়া গেছে । পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্র বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও রফতানি করতে পারবে কিনা সে প্রশ্ন না হয় নাই করলাম । একই সাথে ভারত ও পাকিস্তানে পারমাণবিক বোমা বানানো হয়েছে । পাকিস্তানে এই প্রযুক্তি যিনি আবিষ্কার করেছিলেন সেই জনাব আবদুল কাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা প্রকাশ কর বলছি এর জন্য তাকে যে মাত্রায় নাজেহাল হতে হযেছিল বোধকরি আবদুল কাদেরে মত একজন নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক বলে কোন কথা বলেন নি । অথচ ভারতের কথা ভাবুন ভারতে এটি তৈরি করেছিলেন এপিজে আবুল কালাম । তিনি ভারতের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তাকে সম্মানিত করা হয়েছিল । থাক সে কথা । পাকিস্তান থেকে পণ্য আনায় যাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে তাদের এই দাহের কারণ কি ? বাংলাদেশ যদি ভারত বৃটেন আমেরিকাসহ বিদেশের বিভিন্ন দেশের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে তাহলে পাকিস্তানের সাথে সমস্যা কোথায় । বিশেষ করে বিগত সময়গুলোতে ভারতের সাথে বৈধ অবৈধ বাণিজ্যের বিবেচনাতেও পাকিস্তানের সাথে ব্যবসা গ্রহণযোগ্য । আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন সদুকে হারাম করেছেন । এরঅর্থ হচ্ছে সৎ পথে থেকে লোক না ঠগিয়ে ব্যবসা করা যায় । দুটি প্রত্যক্ষ উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি শুরু করি । ১. ৭১ সালে পর বাংলাদেশে ভারতীয়দের প্রবেশ যাতায়াত এমন এক অবস্তায় পৌঁছেছিল যখন বোঝাই যেতনা এটি ভারত নয় । সে সময়ের একটি উদাহরণ । বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ি ভারতীয় একটি দৈনিকের এজেন্ট হলেন । এজন্য ভারতীয় ঐ পত্রিকার মালিক বা তার প্রতিনিধিকে জামানতও দিয়েছেন মোটা অংকের । লোকটি ভারতে ফিরে যাবার পর দেখাগেল একই কাজ তিনি এত অধিকসংখ্যক লোকের সাথে করেছেন যে প্রত্যেকেরই কপালে হাত । পরিণতিতে সবারই টাকা মার খেল । মুফতে ভারতয়ি মালিক টাকা লুটে নিল । এটি প্রকারান্তরে সর্বশেষ সময় পর্যন্ত বহাল ছিল । এইযে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গণ পরিবহণের দুর্দশার কথা বলি। এরমলে রয়েছে ভারতীয় গাড়ি আমদানির আইনগত বিষয় । আওয়ামী আমলে বাংলাদেশে আইন করে অথবা আইনের প্যাচে ফেলে ভারতীয় গাড়ী আমদানির চারনভ’মি তৈরি করা হযেছিল । মালিক সমিতির কর্ণধর ও আওয়ামী নেতা এনায়েতউল্লাহ ভারতীয় গাড়ী আমদানির নামে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছে । এটি অন্য বিষয় । বাণিজ্যে অসততার কারণে সংকটে রয়েছে বাংলাদেশের পরিবহন খাত । ভারতয়ি প্রতিটি উৎপাদক কোম্পানী নিজেরাই দুনাম্বারি মাল উৎপাদন করে। এমনিতেই ভারতীয় লোহা নিম্মমানের । তার উপর সীমান্ত দিয়ে আরো দুনাম্বারি মালের পাচার হবার ফলে এসব পরিবহন কার্যত মানুষ মারা ফঁদে পরিণত হয়েছে । সাধারণভাবে ভারতীয় মেটালের মেয়াদ দু বছর ।এগুলো জোরা তালি দিয়ে চালাতে গিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন জিম্মি হয়ে পরেছে । এর কারণ আমদানিতে ভারতীয় মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি অবৈধভাবে ব্যয় করতে হয়েছে । গত ১৫ বছর বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের লিলাভুমিতে পরিণত হয়েছিল । যেসব ভারতীয় পণ্য কথিত বৈধ পথে বাংলাদেশে আসতো তার সাথে একই পণ্য অবৈধ পথে আসত । ভারতীয় দাদনে ভরে গেছে দেশ । পোষাক শিল্পের এখন নাজুক অবস্থা । গত কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ভারতীয় কাপড় পোষাক পৌঁছে দেয়া হোত যা মূলত তখনকার সরকারের সমর্থনে চোরাচালানী হয়ে দেশে প্রবেশ করত । সে বিবেচনায় পাকিস্তানী বৈধ আমদানিতে এসব চোরাচালানীরা ক্ষুব্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক ।
পাকিস্তানের সাথে ব্যবসার বিবেচনাতে অনেক আলোচনা রয়েছে । এটি ব্যবসায়িক বিষয় । যারা ব্যবসা করেন তারা ভাল ব্যাখ্যা করতে পারবেন । পাকিস্তানীদের আচরণ ভারতীয়দের চেয়ে অকে চমৎকার । এ অভিজ্ঞতা হয়েছে পাকিস্তান সফরে । সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সফরসঙ্গী হয়ে পাকিস্তান গিয়েছিলাম । তখন পাকিস্তানে ইহুদী পণ্য বর্জনের আন্দোলন চলছিল । অনেক দোকানপাট বন্ধ ছিল । এক যোগে পাকিস্তানের জিন্না মার্কেটে গিয়েছিলাম । কিছু জিনিষ ক্রয় করি । যখন ফিরছি তখন দেখি এক দোকানে মালিক আমার বা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন । কোন কথার সুযোগ না দিয়ে তিনি নিয়ে গেলেন তার দোকানে । সেখান থেকে আমরা কিছু কাপড় কিনেছিলাম । আপ্যায়ন করলেন । বললেন, সুদুর বাংলাদেশ থেকে এসে আমার দোকানে কেনাকাটা করেছেন এজন্য ধন্যবাদ । এরপর যেটি হেল সেটিই আলোচনার বিষয় ।তিনি আমাকে কিছু টাকা ফেরত দিয়ে বললেন এটি আপনার পাওনা । আমি বললাম না আপনার সাথে পাওনা-দেনা মিটিয়ে গিয়েছি । তিনি বললেন না এটি নিয়ে নিন । অনেক কথার পর এটি গ্রহণ করলাম । বিষয়টা তখনও বুঝে উঠতে পারিনি । আসলে কি ঘটেছে । দেশে এস হিসেব মিলল । বিক্রেতা একটি পণ্য কম দিয়ে তার মূল্য রেখেছিল। মালিক এটা জানতে পেরে সেই মূল্যই এভাবে ফেরত দিয়েছিল ।আসলে এটি মূল্যবোধের ব্যাপার । পাকিস্তানের অন্য বাজারগুলেতেও দেখেছি বাংলাদেশি হিসেবে তারা আলাদা সম্মান করে । বাংলায় কথাবলে । বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা করা ও সম্পর্ক উন্নয়ণের তীব্র আকাঙ্খা তাদের মধ্যে দেখেছি । দেশে এসে এনিয়ে লিখেছি । তখন শুনেছি অসা যাওযার খবরচের নানা হিসেব । আজ যখন বাংলাদেশের থেকে পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য শুরু হচ্ছে তখন নিশ্চই নতুন অংক আছে । একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় পাকিস্তানী পণ্য ভারতীয় পণ্যের চেয়ে গুণে মানে উন্নতমানের । ব্যবসায়িক আচরণও ভ্রাতৃপ্রতীম । বোধকরি প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে বাংলাবন্ধা দিয়ে চীনে প্রবেশের একটা উদ্যোগ নেয়া হযেছিল যা অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সাথে চীন হয়ে বানিজ্য । ভারত এটি টের পেয়ে হতে দেয়নি । চোরাচালানী রোধে মুদ্রাপাচার রোধে পাকিন্তানের সাথে বাণিজ্য হয়ত কিছুটা হলেও ইতিবাচক ভূূমিকা রাখেতে পারে । সেই সাথে দুদেশরই অর্থিকভাবে লাভবান হবার সুযোগ রয়েছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না সবকিছুর পরেও পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের আলাদা একটি মাত্রা রয়েছে ।
৭১-এর রপর ভারতীয়রা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে থাকা পাকিস্তানী অস্ত্র্ শুধু নয় জাহাজ ভতির্ করে লুটকরা পণ্য নিয়ে গেছে । ঢাকার নিউমার্কেট থেকে শুরু করে সব বাজারগুলোতে ভারতীয় সেনা বাহিনী লুট করেছে । এসব চিত্র ধারণ করতে গিয়ে চিত্র পরিচালক জহির রায়হান নিহত হযেছিলেন । এরকম আরো ঘটনা রয়েছে । বলার অপেক্ষা রাখে না পকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্কের একটা বড়ভিত্তি হচ্ছে ঐতিহ্যগত ।অনেক টানা পোড়েন সত্ত্বেও এটা বলা যায় ভারতের সাথে সম্পর্কের তিক্ততা শুধু ব্যবসা বাণিিেজ্যর নয় সব দিক থেকেই । বাংলাদেশ কে ডি মুসলিমাইজ করতে ভারতীয যে নীল নকশাঁ রয়েছে তার অংশ হিসেবে তারা ব্যবসাকে ব্যবহার করছে । কথিত সম্পর্কের সূতায় তারা মূলত দখলিকরণের ফন্দি আঁটছিল । আর সেকারণেই নির্বাচন প্রতিহত করে জনআকাঙ্খার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে ভারত । এ অবস্থধা এখনো রয়েছে । বাংলাদেশে ৫ আগষ্টের পরিরবর্তন তারা গ্রহণ করতে পারছে না । মানতে পারছে না চাচ্ছে না । এই না চাওয়ার নানা প্রতিক্রীয়া নানাভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে । স্বরূপে এসছে চট্টগ্রামে একজন আইনজীবিকে হত্যা এবং গ্রেপ্তারকৃতকে নিয়ে ভারতীয় বিবৃতি । পরিস্থিতি যে আরো নাজুক হতে পারে তাতে সন্দেহ করার কোন কারণ নেই। গত ১৫ বছর ভাতীয়রা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে জাল বিস্তার করেছে তার বিস্কতৃতি কোথায় কতটা তা জানা সকলে পক্ষে সম্ভব নয় । রাজনীতির আলোচনায় না গিয়ে শুধু এটুকু বলে শেষকরতে চাই নিউটনের তৃতীয় সূত্র মতে প্র্রত্যেক ঘটনারই যেহেতু সম মাত্রায় বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে সেকারণে গত ১৫ বছলে বা তারো আগে থেকে ফুঁসে ওঠা ভারত বিরোধী জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করা জরুরি । মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর সেই পুরনো উক্তি দিয়েই শেষ করি, ‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে পারলেই আমরা জিতব অথবা পরাজিত হব’ ।
লেখক সিনিয়র সাংবাদিক