আন্তর্জাতিক সংবাদশিরোনাম

গাজার সবচেয়ে দীর্ঘ সুঙ্গ ধ্বংস করেছে ইসরায়েল

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সীমান্ত ছাড়িয়ে যাওয়া একটি গোপন সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী এই সুড়ঙ্গটি নির্মাণ করেছে দাবি তাদের।
এ বিষয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষমন্ত্রী এভিগদর লিবারম্যান জানান, এটি এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত সুড়ঙ্গগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গভীর ও দীর্ঘ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস জানান, ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের সময় সুড়ঙ্গটি খোঁড়া হয়। কেননা ওই যুদ্ধের সময় সময় তারা হামলার আশঙ্কায় ৩০টিরও বেশি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে দিয়েছিলো। কেউ যেন আর কোন টানেল নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন এই সেনা কমান্ডার।
তার দাবি, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র বাহিনী হামাস হামলার উদ্দেশ্যে এই সুড়ঙ্গটি খুড়েছে। সুড়ঙ্গটি গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া অঞ্চল থেকে শুরু হয়ে ইসরাইলী নাহাল ওজি শহরের কয়েক মিটার পর্যন্ত প্রবেশ করেছে বলে জানান তিনি। তবে টানেলটির বের হওয়ার কোন পথ নির্মাণ করা হয়নি। হামলার সুবিধার্থে এই সুড়ঙ্গটির সঙ্গে আরেকটি সুড়ঙ্গ জোড়া দেয়া ছিলো বলেও জানান এই ইসরাইলী সেনা।
গত সপ্তাহেই ইসরাইলি বাহিনী সুড়ঙ্গটির ভেতর বিভিন্ন বস্তু ঠেসে দেয় যেন দীর্ঘদিন এটি কেউ ব‍্যবহার করতে না পারে। গাজায় চলতি মাসে এ নিয়ে ৫টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা হলো। এরমধ্যে কয়েকটি সুড়ঙ্গ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ এবং বাকিগুলো গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের তৈরি বলে দাবি করেন ইসরায়েলি সেনা মুখপাত্র জোনাথন।
গাজা উপত্যকায় গোপন সুড়ঙ্গের শনাক্তে গত বছর থেকে বিশেষ উপকরণ নিয়ে মাঠে নেমেছিলো ইসরায়েল। এবার তারা নতুন সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রতিরোধে শুধু মাটির ওপরে নয় বরং সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোয় মাটির নীচেও হাইটেক সীমান্ত বেষ্টনি স্থাপন করতে শুরু করেছে।
বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েলি-গাজা সীমান্ত

ইসরায়েল সীমান্তে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির বিক্ষোভ
হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজা থেকে ইসরায়েলের সীমান্তের দিকে মিছিল করে যাওয়ার পর তাদের ওপর ইসরায়েলি সৈন্যরা গুলি চালিয়েছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ছয় সপ্তাহব্যাপী এক প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিরা এই বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, অন্তত পাঁচজন ফিলিস্তিনি গুলিতে নিহত হয়েছে। আরও প্রায় সাড়ে তিনশো’ মানুষ ইসরায়েলি সৈন্যদের চালানো গুলিতে আহত হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, অন্তত ছ’টি জায়গায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলছে এবং তারা দাঙ্গায় ‘উস্কানিদাতাদের’ দিকে গুলি করছে।
ফিলিস্তিনিরা তাদের এই মিছিলের নাম দিয়েছে ‘গ্রেট মার্চ টু রিটার্ন’ বা নিজের ভূমিতে ফিরে যাওয়ার মিছিল। সীমান্তের কাছে তারা পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপন করে সেখানে অবস্থান নিয়েছে।
ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের ভেতরে তাদের ফেলে আসা বাড়ি-ঘরে ফিরে যাওয়ার অধিকার চায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, গাজা-ইসরায়েল সীমান্তের কাছে পাঁচটি জায়গায় প্রায় সতের হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে। এরা সেখানে গাড়ির টায়ার জ্বালাচ্ছে এবং সীমান্তের প্রাচীরের দিকে মলোটভ ককটেল ছুঁড়ছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহতদের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি বালকও রয়েছে।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এই সহিংসতার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ বলেছেন, তাঁরা এক ইঞ্চি ফিলিস্তিনি জমিও ইসরায়েলের কাছে ছাড়বেন না।
তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনের কোন বিকল্প নেই এবং আমাদের ফিরে যাওয়ার অধিকার ছাড়া এই সংকটের কোন সমাধান নেই।”
গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে সব সময় ইসরায়েলের কড়া সামরিক পাহারা থাকে। সেখানে ইসরায়েল তাদের সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়িয়েছে।
ফিলিস্তিনিরা প্রতি বছরের ৩০শে মার্চকে ‘ভূমি দিবস’ হিসেবে পালন করে। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ফিলিস্তিনিরা যখন তাদের জমি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল, তখন ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে ছ’জন নিহত হয়।
ছ’সপ্তাহ ব্যাপী এই বিক্ষোভ শেষ হবে আগামী ১৫ই মে, যেদিনটিকে ফিলিস্তিনিরা ‘নাকবা’ কিংবা বিপর্যয় দিবস হিসেবে পালন করে। ১৯৪৮ সালের ঐ দিনে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ফেলে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর।
ফিলিস্তিনিরা বহু দশক ধরে ইসরায়েলে তাদের ফেলে আসা বসত বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবি করছে। কিন্তু ইসরায়েল এই অধিকারের স্বীকৃতি দেয়নি।
বিবিসি বাংলা/নয়া দিগন্ত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button