পতাকা ডেস্ক: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘আক্রমণের মুখে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের, আজ ৫৩ বছর পরও একটা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে এই গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণের বিষয়ে আমাদের কথা বলতে হচ্ছে। আমরা বলেছি, এর নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। আমরা সব সময় মনে করি, আমাদের লড়াইটাই তো বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য। এই দীর্ঘ লড়াই করে আসছি, এই লড়াইয়ের মূল বিষয় হচ্ছে, আমি আমার কথা বলতে চাই। আমি আমার অধিকার প্রয়োগ করতে চাই, ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে চাই। এ বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন কিছু মানুষ জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিছু কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো দেশকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এটি বন্ধ করা দরকার। না হলে যে লক্ষ্য নিয়ে ছাত্র–জনতা প্রাণ দিয়েছেন তার সবটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
সভায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ১৫ বছর গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে স্বাধীন সাংবাদিকতা। সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিকশিত হতে পারে না। রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ হলো গণমাধ্যম। এটা যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে গণতন্ত্র কোনোদিন শক্তিশালী হবে না।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী পরিস্থিতিতে যখন সংবাদমাধ্যমগুলোর চাপমুক্ত পরিবেশে কাজ করার কথা, তখন কোনো কোনো সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা ও হুমকি অব্যাহত। এমনকি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি মহল ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে যে ধরনের কর্মসূচি ও প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে, তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর চরম হুমকি ছাড়া আর কিছু নয়। বিমানবন্দরে নিউ এজ সম্পাদক পুরোনো স্বৈরাচারী আমলের মতোই দুই দফা হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঢালাওভাবে বাতিল হয়েছে সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড।
নোয়াব সভাপতি বলেন, কর্মসূচির নামে পত্রিকা অফিস দুটি ঘেরাও, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় অফিসে হামলা এবং পত্রিকা বিতরণে বাধা সৃষ্টির যে ঘটনা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসবের মাধ্যমে যে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য চরম হুমকি।
ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, ১৫ বছর স্বৈরশাসনের সময় স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ধ্বংস করার, কণ্ঠরোধ করার যেসব প্রক্রিয়া চলেছে, সেসব প্রক্রিয়া এখনও চলছে। আমরা এগুলোর ইতি চাই। এসব যেন দেশে আর কখনো না হয়। কিন্তু এখন নতুন রূপে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের ওপরে আক্রমণ হচ্ছে। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও শঙ্কাজনক।
বিজেপির সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, এই সংকট নিয়ে অনুষ্ঠানটি করা উচিত ছিল। সংকট যে আছে এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। এ ধরনের একটি ফ্যাসিস্ট শাসন চলে যাওয়ার পর এ ধরনের সংকট আসতেই পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল সরকার আখ্যা দিয়ে আন্দালিব রহমান বলেন, আপনারা যদি সত্যি প্রোটেকশন চান, তাহলে আপনাদের ঐকান্তিক প্রস্তাব করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে আপনারা ক্ষমতা দিয়ে দেন। খারাপ হোক ভালো হোক, রাজনীতিবিদরাই সমাধান করবেন। আমরাই আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারব।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পরও যদি সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণ হয়, তারা যদি লিখতে না পারে তাহলে তা দুঃখজনক।
নেয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আলতামাশ কবির ও ফিনান্সিয়াল এক্সেপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম ও প্রচার ও দাওয়াত বিষয়ক সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ুম, এবি পার্টির আহ্বায়ক আবদুল ওহাব মিনার ও সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, খেলাফত মজলিশের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন ও যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসীর আলী, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাছির উদ্দীন পাটোয়ারী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমাদ ও বাসদের উপদেষ্টা খালেখুজ্জামান প্রমুখ।