
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক, যেকোনো সময় কিছু ঘটে যেতে পারে বলে জানিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা।
সোমবার সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা এ কথা জানান।
মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, বেগম জিয়া মূল চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। আমরা যে চিকিৎসা দিচ্ছি তা তাৎক্ষণিক। জরুরিভিত্তিতে তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। না হলে যেকোনো সময় তিনি মারা যেতে পারেন।
তিনি জানান, লিভারের সংক্রমণের কারণে বেগম জিয়ার বার বার পেটে পানি চলে আসছে। উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হলেও কাজ হচ্ছে না। পেট থেকে পানি হৃদযন্ত্র পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। এজন্য ইতোমধ্যে তাকে দুই দুইবার সিসিইউতে নেয়া হয়েছে।
চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, বেগম জিয়ার শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হওয়ায় এ পর্যন্ত চার ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। আমাদের হাতে আর কিছু নেই, যা কিছু করার ছিল করেছি। উন্নত চিকিৎসাই একমাত্র ভরসা। দুই বছর আগে টিপস পদ্ধতিতে চিকিৎসা হলে বেগম জিয়ার পেটে ও হৃদযন্ত্রে রক্তক্ষরণ হতো না। উনার অবস্থাও এত আশঙ্কাজনক হতো না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে টিপস ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয় না। ২০০৬ ও ২০০৮ এ বারডেমে পরীক্ষামূলকভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট চালু হলেও সেটি অব্যাহত রাখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে পরীক্ষামূলক চালু হয়েও আবার বন্ধ হয়ে গেছে।
মেডিকেল বোর্ডের আরেক সদস্য প্রফেসর নূরউদ্দিন বলেন, লিভার সিরোসিসের কারণে কষ্ট পাচ্ছেন। অনেকগুলো জটলতা দেখা দিয়েছে। পেটে পানি আসা, বুকে পানি আসছে। সেটা অত্যন্ত জটিল। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। বিভিন্ন জটিলতার কারণে আমরা উনাকে বাসায় নিতে পারছি না। আমাদের হাতে আর কোনো চিকিৎসা নাই। উচ্চ মানের এন্টিবায়োটিকও কাজে আসছে না। লিভার সুস্থ করার জন্য একমাত্র চিকিৎসা লিভার ট্রান্সপ্লানটেশন। এই অবস্থায় উনার মৃত্যুর ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৮০ বছর বয়সে মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন। লিভার সিরোসিস মারাত্মক অসুখ। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, বুকের ও পেটের পানি বের করার জন্য সিসিইইতে নেয়া হয়। মানুষকে দেখানোর জন্য নয়। তিনি বলেন, লিভার সিরোসিসের সমস্যাটা ব্লিডিং থেকেই বুঝতে পারি। উনি এমন অবস্থায় যে সহসাই বাসায় নিতে পারব না। টিপস প্রসিডিউর করতে পারলে অবস্থার উন্নতি হবে। সেজন্য তাকে দেশের বাইরে নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আলিয়া মাদরাসায় বেগম খালেদা জিয়া হেঁটেই গিয়েছিলেন। উনি এরকম অসুস্থ হলো কেন সেটা সবার প্রশ্ন। কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই এধরণের জটিলতা দেখা দেয়। মেডিকেল বোড দ্রুত মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সেন্টারে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
স্লো পয়জনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। কখনো উন্নত পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এগুলো বের হতে পারে। তার আগে শুধু ডায়াবেটিস ও আর্থাইটিস ছিল। আর কোনো সমস্যা ছিল না। তিনি আরও বলেন, লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন বাংলাদেশে হয় না। আর করণীয় নেই।
সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ শাহাবুদ্দিন তালুকদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ও বেগম খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডাঃ নূরউদ্দিন আহমেদ, ডাঃ এস এম এ জাফর, ডাঃ আহসানুল আমিন, ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন, ডাঃ শামসুল আরেফিন, ডাঃ জিয়াউল হক, ডাঃ মহসিন, ডাঃ শেখ ফরিদ আহমেদ, ডাঃ জাফর ইকবাল, ডাঃ আতিক, ডাঃ মামুনুর রশীদ মামুন, বিএনপি স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, ডাঃ রফিকুল ইসলাম।