sliderজাতীয়শিরোনাম

খাদ্যের মান নিয়মিত পরীক্ষা করে ফলাফল প্রকাশের দাবি

দীর্ঘ আন্দোলন ও ব্যাপক জনসমর্থনের প্রেক্ষিতে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণীত ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বিষাক্ত ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্যে বাজার সয়লাব। খাদ্যের বিষাক্ততায় নানা ধরনের জটিল রোগ এখন প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। তাই বাজারজাত সকল খাদ্য ও পানীয় বিষ ও ভেজালমুক্ত নিশ্চিত করা ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’এর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্পিত এ দায়িত্ব কর্তৃপক্ষ সম্পাদন করবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে নিয়মিত সকল খাদ্য ও পানীয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ল্যাবে পরীক্ষা করে তার ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।
শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে আয়োজিত আমানববন্ধন থেকে বক্তারা এ দাবি জানান। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
বক্তারা বলেন, ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবে ২০১৫ সালে ৮২টি খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করা হয়। এতে গড়ে ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি নিষিদ্ধ ডিডিটি, অলড্রিন, হেপ্টাক্লোরসহ অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে। ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাক-সবজির নমুনাতেই বিষাক্ত বিভিন্ন কীটনাশকের উপস্থিতি মিলেছে। চালের ১৩টি নমুনায় মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়া সম্পন্ন আর্সেনিক আর পাঁচটি নমুনায় পাওয়া গেছে ক্রোমিয়াম। মৎস্যসম্পদ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মাছে ব্যবহৃত কীটনাশকের মধ্যে ৬০ শতাংশ চরম বিষাক্ত, ৩০ শতাংশ অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত আর শুধুমাত্র বাকী ১০ শতাংশ বিষমুক্ত।
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে এসবের প্রভাবে গলায় ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার, হাঁপানি, চর্ম রোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়। ফরমালিনযুক্ত খাবারে পাকস্থলীতে প্রদাহ, লিভারের ক্ষতি, অস্থিমজ্জা জমে যায়। এসব খাবারে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের জটিল রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কার্বাইড নার্ভ সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর। ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড ক্যালসিয়াম কার্বাইডে বিষাক্ত আর্সেনিক ও ফসফরাস রয়েছে, যা বিষমুক্ত ফলকে বিষাক্ত ফলে রূপান্তারিত করে। এসব খাবারে কিডনি, লিভার, ত্বক, মূত্রথলী কিংবা ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। বাজারের চিপস, ওয়েফার, চকলেট ও জুসে কার্বোহাইড্রেড, মেলামিন অতিমাত্রায় থাকায় শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হলেও এসব খাবারের প্রতি তাদের আকৃষ্ট করে তোলা হচ্ছে। বর্তমানে বেশিরভাগ শিশুরা এ কারণে স্থূলতা ও উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছে। তাছাড়াও কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
এসডিজির গোল-২ ও ৩ মানসম্পন্ন খাদ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এসডিজির লক্ষ্য অনুসারে খাদ্য নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে আমাদের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। এসডিজির অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগ এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনতে হবে। বর্তমান অবস্থায় এটি একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।
নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য মান রক্ষা ও বাজার মূল্য নিশ্চিতে বাংলাদেশে প্রায় ২৫টির মতো আইন সরাসরি যুক্ত রয়েছে। এ সকল আইনগুলো মানুষের খাদ্য উৎপাদন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মান নিয়ন্ত্রণে সাথে জড়িত। কতিপয় আইন বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পৃক্ত। মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর মাধ্যমে বিভিন্ন আইনসমূহ প্রয়োগের বিধান রয়েছে।
সুত্র : ইত্তেফাক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button