sliderস্থানীয়

ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়ে তোলেন টেন্ডারবাণিজ্য, চাঁদাবাজি অপকর্মের রাজত্ব

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: নিজের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিলেন রমেশ চন্দ্র সেন। ধান ব্যবসায়ী থেকে এমপি বনে যাওয়া রমেশ হন একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দলে প্রবেশ করে হন, উপদেষ্টামন্ডলী ও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতি মন্ডলীর সদস্য। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে গড়ে তোলেন ত্রাসের রাজত্ব।

নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মের অভিযোগ এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে পতন হয় রমেশ রাজত্বেরও। ১৬ আগস্ট হন গ্রেপ্তার। বর্তমানে রয়েছেন কারাগারে।

রমেশ চন্দ্র সেনের সহধর্মিণী অঞ্জলি রানী সেন বলেন, আমার স্বামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।

রমেশ চন্দ্র সেন ও তাঁর স্বজনদের অনিয়মন্ডদুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একাধিক মামলা দিয়েছেন। স্থানীয় সংবাদকর্মী তানভীর হাসান তানু বলেন, করোনার সময় হাসপাতালে খাবারে অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করায় রমেশের নির্দেশে আমি সহ আরও কয়েক সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হয়। এখনো আমরা ঐ মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি। নাম গোপন রাখার শর্তে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এমন কোনো অপরাধ নেই রমেশ চন্দ্র সেন করেননি। নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাণিজ্য, চাঁদাবাজির গডফাদার ছিলেন তিনি। তাঁর নির্দেশে এসব বাস্তবায়ন করত পার্থ সারথী সেন,মোশারুল ইসলাম,নজরুল ইসলাম স্বপন সহ তাঁর অনুসারীরা। রমেশের বিরুদ্ধে কথা বললেই অপমান, অপদস্ত, লাঞ্ছিত করত তার ঘনিষ্ঠজন মোশারুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম স্বপন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলায় ত্রাসের রাজত্ব গড়েন রমেশ চন্দ্র সেন ও তাঁর স্বজনরা। রমেশের ভাতিজা রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারথী সেন টেন্ডার বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রমেশ ও পার্থ মিলে গড়ে তোলেন ‘সেন গ্রুপ’ নামে কোম্পানি। রমেশ যখন পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন,ঐ সময় মন্ত্রণালয়ের সব ঠিকাদারির কাজ প্রায় একাই বাগিয়ে নিত এই কোম্পানি। হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন রমেশ ও পার্থ। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া এলাকায় গড়ে তোলেন রাইস মিল। ঠিকাদারি কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতেন তারা। সব সেক্টরে চাঁদাবাজি চলত রমেশের নিয়ন্ত্রণে। রমেশের ভাই অনিল চন্দ্র সেন ছিলেন রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। অনিলের কথাতেই রুহিয়া থানা থেকে শুরু করে সব দপ্তরের কাজ হতো। বিরুদ্ধে গেলে করা হতো মামলা, হামলা, হয়রানি।

রমেশের নিজের লোক ছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার ও ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন। অভিযোগ আছে, রমেশের ইশারায় তারা যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে। রমেশের আরেক ঘনিষ্ঠ ‘মুক্তা রানী’। তার নিয়ন্ত্রণে ছিল জেলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। রোগীদের খাবার ও ঔষুধ সরবরাহ করত মুক্তা রানীর ভাতিজা নিপুণ। হাসপাতালে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় লোকবল নিয়োগ ও সরকারি নিয়োগে হস্তক্ষেপ ছিল তার। মুক্তা রানী রাতারাতি কোটিপতি বনে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের শান্তিনগর এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় চাকরির জন্য মুক্তা রানীকে তার ভাতিজা নিপুণের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আমার চাকরি হয়নি। টাকাও ফেরত দেয়নি। টাকা চাইলে মুক্তা লাঞ্ছিত করেন ও নিপুণ আমাকে মারপিট করে তাড়িয়ে দেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাবু বলেন, ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মধ্যে পরিবার পরিকল্পনার সুপারভাইজার পদে চাকরির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। রমেশের জন্য চাকরিটা হয়নি। তিনি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমকে ফোন করে আমাকে ভাইভা থেকে বাদ দিয়ে দেন। অন্য একজনকে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেন। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ার সিদ্দিক মুন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করেছি। তার বদলে পেয়েছি রমেশ চন্দ্র সেনের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা। রমেশের নিয়ন্ত্রণে সড়কে চাঁদাবাজি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিবাদ করাই আমার কাল হয়। রমেশ চন্দ্র সেন কারাগারে থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। অভিযুক্ত অন্যরাও বিভিন্ন মামলার আসামি ও পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button