ক্যালেন্ডারে মমতার ছবি: দেয়ালে ঝোলাবেন না মুসলিমরা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের এবছরের ক্যালেন্ডারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ছবি ছাপা হওয়ায় অনেক মুসলমান বলছেন তাঁরা সেটা ঘরে বা মসজিদে-মাদ্রাসায় রাখতে পারবেন না।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম প্রতি বছর যে ক্যালেন্ডার ছাপে তাতে সাধারণত তাদের দফতর বা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অথবা অন্য কোনও দৃশ্যের ছবি থাকত।
কিন্তু এবছর মমতা ব্যানার্জীর ছবি ছাপায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের একাংশ বলছেন তাঁরা ওই ক্যালেন্ডারটি ঘরে অথবা মাদ্রাসা অথবা মসজিদে টাঙ্গিয়ে রাখতে পারবেন না। এটা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ বলে তাঁদের মত।
তবে কলকাতার কয়েকটি বড় মসজিদের ইমামরা বলছেন, এই নিয়ে এখনকার যুগে প্রশ্ন তোলা অনর্থক। আর ওই সরকারী সংস্থাটি বলছে সংখ্যালঘু মানে তো শুধু মুসলমান সমাজ নয়, তাঁরা অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর জন্যও কাজ করেন।
হুগলী জেলার এক মাদ্রাসার শিক্ষক ও রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষক – শিক্ষাকর্মীর সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলছিলেন তিনি ওই ক্যালেন্ডার কোথাও রাখতে পারবেন না।
“ওই ক্যালেন্ডারে অনেক তথ্য থাকে, যেগুলো বিশেষত ছাত্রদের কাজে লাগে। তাদের নানা রকম বৃত্তি, বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানা যায়। কিন্তু এবার যে ক্যালেন্ডার এসেছে, সেটা তো মাদ্রাসা, মসজিদ বা বাড়িতে রাখার সমস্যা হবে। কোথাও রাখা যাবে না! শরিয়ত অনুযায়ী ছবি সহ ক্যালেন্ডার টাঙ্গানোটা আমাদের পক্ষে অসুবিধাজনক। ছবিটা এড়ানো উচিত ছিল, তাহলে সর্বত্রই রাখা যেত, সরকারী পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া যেত,” বলছিলেন মি. ইসলাম।
আব্দুল মোমেন সম্প্রতি ওই ক্যালেন্ডার পেয়েছেন, কিন্তু ঘরে টাঙ্গাতে পারছেন না সেটি।
বিবিসি বাংলাকে মি. মোমেন জানাচ্ছিলেন, “হাদিসে আছে যে ঘরে কোনও প্রাণীর ছবি থাকলে সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। ফলে ওই ছবি সহ ক্যালেন্ডার আমরা বাড়িতে যেমন রাখতে পারব না, তেমনই মসজিদ মাদ্রাসাতেও রাখতে পারবে না কেউ।”
কিন্তু কলকাতার দুজন ইমাম জানিয়েছেন যে সরকারী সংস্থা তাদের ক্যালেন্ডারে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছাপতেই পারে। কারও যদি পছন্দ না হয় সেটা ঘরে না রাখতে পারেন।
প্রসিদ্ধ নাখোদা মসজিদের ইমাম মুহম্মদ শফিকের কথায়, “যেসব মুসলমান এই প্রশ্নটা তুলছেন, তাঁদের তো সব থেকে আগে নিজের পকেট থেকে, ব্যাঙ্ক থেকে, বাড়ি থেকে সব টাকার নোট সরিয়ে ফেলা উচিত – কারণ সেখানে জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর ছবি আছে! বছর কয়েক আগে কলকাতা পুলিশের ক্যালেন্ডারে আমার নিজের ছবিও ছাপা হয়েছিল আর সেটা তো আমি ঘরে আর দপ্তরে রেখেছিলাম! হজ্জ্বে যেতে গেলও তো ছবি লাগাতে হয়, সেখানে শয়ে শয়ে ক্যামেরা লাগানো থাকে – সে সবই কি তাহলে ইসলামে হারাম? এই যুগে এসব প্রশ্ন তোলা একেবারেই অনর্থক। সরকারের প্রধান হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছাপা হতেই পারে।”
রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান ও তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সুলতান আহমেদ জানিয়েছেন যে তাঁর কাছে ওই ক্যালেন্ডার নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ জানায় নি। সব জায়গাতে ক্যালেন্ডার বিলি বন্টনও চলছে। এ নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই বলে দাবী মি. আহমেদের। তিনি আরও জানান যে তাঁর নিগম তো শুধু মুসলমানদের জন্য নয় – অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্যও তাঁরা কাজ করেন।