sliderরাজনীতিশিরোনাম

কোটা নিয়ে সরকারের নোংরা খেলা প্রতিহত করতে হবে—এবি পার্টি

পতাকা ডেস্ক: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এবি পার্টি বলেছে; এতে আইএমএফ এবং ধনবাদী অলিগার্কদের জয় হয়েছে, হেরে গেছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ। মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, দুর্বল বিনিয়োগ ও খেলাপি ঋণের কোন সুরাহা এ বাজেটে হয়নি; এই বাজেট সরকারের ডামি ও চুরি নীতির ধারাবাহিকতা মাত্র। পাশাপাশি আদালতকে ব্যবহার করে কোটা পুণর্বহালের মাধ্যমে সরকার আবারও নোংরা খেলা শুরু করেছে বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দলটি।
আজ বিকেলে এক প্রেসব্রিফিং থেকে এই প্রতিক্রিয়া জানান বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার। এসময় বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি।
দুর্নীতি, কালোটাকা ও ঋণখেলাপিবান্ধব বাজেট প্রত্যাখ্যান ও বৈষম্যমূলক কোটা পুণর্বহালের প্রতিবাদে আজ বিকেল ৪ টায় বিজয় নগরস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলন থেকে নেতৃবৃন্দ বলেন; আওয়ামীলীগ ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছে তাতে দুই তৃতীয়াংশ সরকারের বেতন ও বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে খরচ হয়ে যাবে। এই বাজেটে খরচের সবচেয়ে বড় খাত হলো বৈদেশিক ঋণপরিশোধ খাত। এ খাতে বাজেটের ১৪.২ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। ৪ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সরকার এই বাজেটে নতুন করে আরও ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা নতুন ঋণ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। উন্নয়নের যে বাজেট রাখা হয়েছে সেটা পুরাটাই ঋণ নির্ভর। দেখে মনে হচ্ছে সরকার আইএমএফ থেকে তৃতীয় কিস্তি সুরক্ষিত করতে মরিয়া, ডলারের রিজার্ভ এবং পেমেন্টের ভারসাম্যের উপর চাপ কমাতে সে দিশাহারা। প্রস্তাবিত বাজেট ঋণ ও ঘাটতি ভিত্তিক হওয়ায় এর ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা চাওয়া ছাড়া তার আর কোনো বিকল্প নেই। এভাবে ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছর পর দেখা যাবে করের সব টাকা দিয়েও ঋণ শোধ করা যাবেনা এবং ঋণ করে ঋণের সূদ শোধ করতে হবে। অর্থাৎ পরিস্কার দেখা যাচ্ছে দেশ দেউলিয়া হওয়া এখন সময়ের ব্যপার মাত্র। এই স্বৈরাচারী শাসনের অবিরাম লুট ও লুণ্ঠন এভাবে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেশকে চিরস্থায়ী ঋণের ফাঁদে ফেলে দিচ্ছে।

বৈধ আয়কর দাতাদের সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ আর অবৈধ কালোটাকার মালিকদের কর ১৫ শতাংশ করার সমলোচনা করে নেতৃবৃন্দ বলেন; এটা সরকারের কৌশলগত ডামি ও চুরি নীতির ধারাবাহিকতা। নিজস্ব লোককে দিয়ে তারা যেভাবে বিরোধীদল বানিয়েছে তেমনি দলীয় লোকদের দুর্নীতি-লুটপাটের কালোটাককে বৈধ করে দেয়ার এটা একটা নির্লজ্জ পদক্ষেপ। নেতৃবৃন্দ বলেন, বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭% প্রস্তাব করা হলেও চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে প্রায় ৫.৮%। যদিও সরকারের দেয়া তথ্য ও ডাটা বিশ্বাস করা কঠিন কারণ তারা সেখানেও নানা ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে থাকে। রাজস্ব সংগ্রহের পরিকল্পনাকে আকাশ কুসুম ও অবাস্তব আখ্যা দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন; এনবিআর কখনোই ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারেনি। শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্তদের ওপর করের বোঝা দিন দিন অসহনীয় মাত্রায় বাড়ছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়; সরকারী সংস্থাগলো মূল্যস্ফীতি ৯% বললেও বাস্তবে মুল্যস্ফীতি ২০-৪০%।
এই বাজেট বাস্তবায়িতে হলে মূল্যস্ফীতি কমার বদলে আরও বাড়বে, দরিদ্র পরিবার বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম অব্যাহত থাকবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রস্তাবিত বাজেটকে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকারাবদ্ধ বাজেট না বলে ‘দুর্নীতি, কালোটাকা ও ঋণখেলাপিবান্ধব দেশ দেউলিয়া করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাজেট’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এবি পার্টি মনেকরে এতে আইএমএফ এবং ধনবাদী অলিগার্কদের জয় হয়েছে, হেরে গেছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ। এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, দুর্বল বিনিয়োগ ও খেলাপি ঋণের কোন সুরাহা হয়নি বলে তারা মন্তব্য করেন।
বৈষম্যমূলক কোটা পুণর্বহালে সর্বোচ্চ আদালতের রায় ব্যবহার করাকে সরকারের নতুন দূরভিসন্ধি ও নোংরা খেলা অভিহিত করে প্রেস ব্রিফিং থেকে এর বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন শারীরীক প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর নৃ-গোষ্ঠী ছাড়া অন্য কোন ধরনের কোটার ব্যবস্থা রাখা হবে সংবিধানের লংঘন ও রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির পরিপন্থী। মুক্তিযুদ্ধের পোষ্য কোটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকারের অপমাণ এবং স্বাধীনতার মৌলিক অঙ্গীকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রেসব্রিফিং থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংকালে দলীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেইন, সহকারী সদস্য সচিব এম আমজাদ খান, এবি যুব পার্টির আহ্বায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, যুব পার্টির সদস্য সচিব হাদিউজ্জামান খোকন, গাজীপুর জেলা যুগ্ম-আহবায়ক ইকবাল হোসাইন, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, এবি পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব সফিউল বাসার, কেফায়েত হোসেন তানভীর, আহমেদ বারকাজ নাসির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান মিলু, এ্যাডভোকেট শরণ চৌধুরী, আমেনা বেগম, রুনা হোসাইন, যুব পার্টি মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার কৌশিক, সদস্য সচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, রাশেদুল ইসলাম, ইমরান হোসাইন শিবলু, পল্টন থানা আহ্বায়ক আব্দুল কাদের মুন্সীসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button