মোঃ মাসুদ, কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি : ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আটিবাজার এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ২ কেজি ১০০ গ্রাম হেরোইন সহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (২২ আগষ্ট) এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির জানান,ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, পিপিএম-বার,এর নির্দেশে ঢাকা জেলা পুলিশ কর্তৃক মাদক উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিল এর ব্যাপারে বিশেষ অভিযান এর ঘোষণা দিলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আমীনুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ শুরু থেকে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবু্দ্দিন কবীর, বিপিএম এর নেতৃত্বে ও অফিসার ইনচার্জ মামুন-অর রশিদ এর সার্বিক সহযোগীতায়, এসআই (নিঃ) অলক কুমার দে, এসআই (নিঃ) ইমরান হোসেন, এসআই (নিঃ) রিয়াজ মাহমুদ ও এএসআই (নিঃ) আল-আমিন খন্দকার এর সমন্বয়ে একটি চৌকস আভিযানিক দল বড় আকারের মাদক উদ্ধারের লক্ষে কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ ও ২২ আগষ্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন আটিবাজার ইউসিবি ব্যাংক এর সামনে অবস্থানরত মোঃ আলী ও মোঃ হাবিবুল ইসলাম রানা এর হাতে দুটি সন্দেহজনক আটার প্যাকেট তল্লাশীকালে দেখা যায় যে, দুটি প্যাকেটের মধ্যে পৃথক পৃথক ভাবে ৫০০ পুড়িয়া করে সর্বমোট ১০০০ পুড়িয়া (১০০ গ্রাম) হেরোইন রয়েছে। তাদেরকে পৃথক পৃথক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে, তাদের কাছ থেকে আরো জানা যায় যে কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচরে ২ টি আলাদা কারখানায় হেরোইন প্রক্রিয়াজাত করার পর এভাবে প্যাকেটিং করে ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা হয়।
এবিষয়ে শাহাবুদ্দিন কবির আরো জানান এই কারখানা থেকে হেরোইন কখনও মসলার প্যাকেটে, আবার কখনো আটার প্যাকেটে যাহা ইলেক্ট্রিক প্যাকেটিং মেশিন দিয়ে মুখ আটকিয়ে কেরাণীগঞ্জ সহ ঢাকার আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় বাজারজাত করে থাকে। উক্ত তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর, বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর নেতৃত্বে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মামুনুর রশিদ পিপিএম এর সমন্বয়ে এসআই (নিঃ) ইমরান হোসেন সহ কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার একটি আভিযানিক দল আরশি নগরের লেক সিটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এসডি মহল এর ৪র্থ তলায় একটি হেরোইন তৈরী, প্যাকেজিং ও বাজারজাতকরনের কারখানার সন্ধান পায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনদের সাথে নিয়ে কারখানার ভিতরে ঢুকলে ফয়েল পেপারের ৯৮ টি বান্ডিল পাওয়া যায় যা দ্বারা হেরোইন এর পুরিয়া বানানো হয় এছাড়াও বিভিন্ন ব্যান্ডের আটা-ময়দা, হলুদের গুড়া, মরিচের গুড়ার ১০০০ টি খালি প্যাকেট পাওয়া যায়,এসব খালি প্যাকেটের মধ্যে হেরোইনের পুরিয়া গুলো ঢুকিয়ে ইলেক্ট্রিক মেশিন দ্বারা মুখ আটকিয়ে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অত্যন্ত অভিনব কায়দায় সুকৌশলে বিভিন্ন এলাকায় এ হেরোইন বাজারজাত করে থাকে সংঘবদ্ধ একটি মাদকচক্র । উক্ত কারখানা হতে হেরোইন প্রস্তুত ও প্যাকেজিং এর সাথে জড়িত হেলাল ও বিপ্লব কে ১ কেজি হেরোইনসহ গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও উক্ত কারখানা হতে হেরোইন প্রস্তুত এর বিভিন্ন কম্পোজিশন ব্লেন্ডিং করার জন্য ব্লেন্ডিং মেশিন, ইলেক্ট্রিক প্যাকিং মেশিন, ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিন, হেরোইন এর বিভিন্ন কেমিক্সসহ আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশ উপস্থিত সাক্ষীদের মোকাবেলায় উদ্ধারকৃত মালামাল জব্দ তালিকামূলে জব্দ করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত হেলাল ও বিপ্লব এর দেওয়া তথ্যমতে আটিবাজারের সুজন হাউজিং এর ১০ নাম্বার রোড এর সি-ব্লক এর ভাড়া বাসার নিচতলায় তাদের অপর আরেকটি কারখানা আছে বলে জানা যায়। সঙ্গে সঙ্গে উক্ত কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে বিল্লাল ও শরিফুলকে গ্রেফতার করে তাদের হেফাজত হতে প্রায় ১ কেজি হেরোইন উপস্থিত স্থানীয় জনতার সম্মূখে জব্দ তালিকামূলে উদ্ধার করা হয়। উক্ত কারখানা থেকেও হেরোইন প্রস্তুত ও বিপনন এর সাথে জড়িত আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন মালামাল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা দীর্ঘদিন ধরে কেরানীগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে অভিনব কায়দায় হেরোইন প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন আটা-ময়দা ও মসলার প্যাকেটে প্যাকেটিং করে ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করে আসছিল। অভিযনে উদ্ধার করা ২ কেজি ১০০ গ্রাম হেরোইনের মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা।
সংঘবদ্ধ এই মাদকচক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে ও মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে জানানো হয় ।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের হলেন ১। মোঃ হেলাল (৪৫), পিতা- সাত্তার, মাতা- জুলেখা বেগম, সাং- টিকাসার (সরদার বাড়ী), থানা- গৌরনদী, জেলা- বরিশাল, ২। বিপ্লব (২২), পিতা- হেলাল, মাতা- মরিয়ম বেগম, সাং- টিকাসার (সরদার বাড়ী), থানা- গৌরনদী, জেলা- বরিশাল, ৩। মোঃ বিল্লাল (২২), পিতা- মৃত সোলায়মান, সাং- বাঁশবাড়িয়া চনচনিয়া, থানা- টুঙ্গিপাড়া, জেলা- গোপালগঞ্জ, ৪। মোঃ শরিফুল ইসলাম (২০), পিতা-জহির মুন্সি, সাং-জব্বার আলী মুন্সিবাড়ী মুন্সিকান্দি, থানা-শিবচর, জেলা- মাদারীপুর, ৫। মোহাম্মদ আলী (২৬) পিতা তৈয়ব মাস্টার, মাতা সাদিজা বেগম বর্তমান ঠিকানা+ স্থায়ী ঠিকানা -বাসা নাম্বার ৩৫,ব্লক ই, ৫ নং সেক্টর, জেনেভা ক্যাম্প থানা মোহাম্মদপুর, ডিএমপি ঢাকা, ৬। মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান রানা (৩০) পিতা মৃত রতন, মাতা মৃত রানু বেগম, স্থায়ী ঠিকানা চিঙ্গারিয়া পেদা বাড়ি, ইউনিয়ন আমখোলা, থানা-গলাচিপা জেলা পটুয়াখালী,বর্তমান ঠিকানা -করিম হাজীর গ্রাম, হোম স্ট্রিট ডি ফোর ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া, আটি বাজার থানা কেরানীগঞ্জ মডেল, ঢাকা