কেমন আছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত অভিবাসীরা
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস করেন বিশ্বের অনেক দেশের অভিবাসী। দেশটির সরকারি তথ্যমতে অভিবাসীর সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। যারা নানা সময়ে ভাগ্যের অন্বেষনে সেখানে এসেছেন।
কিন্তু অভিবাসীদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় জীবন খুব একটা সহজ নয়। হামলার ভয় নিয়ে সেখানে বাস করেন অনেকে। আর দেশটির মূদ্রা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। সেটিও একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যার মুখে কেমন আছেন দক্ষিন আফ্রিকার অভিবাসীরা?
জোহানেসবার্গের উত্তরে ঘনবসতিপূর্ন এলাকা ডিপস্লুঅট। সেখানে ফুংগাই এর নিজের দোকান আছে।
দোকানে বসে ফুংগাই বলছিলেন “আমি ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ে থেকে এসেছি। একটা সুন্দর সম্ভাবনাময় জীবনের খোঁজে এসেছিলাম আমি”। নিজের দোকান ঘুরে দেখাচ্ছিলেন ফুংগাই।
“এখানে মুলত শুকনো খাবার অর্থাৎ যেসব খাবার নষ্ট হয়না সেগুলো বিক্রি করি। যেমন ধরুন, মাখন, ময়দা, চিনি এরকম সব পণ্য”।
দক্ষিণ আফ্রিকার পাশের দেশ জিম্বাবুয়ে।
কিন্তু সেই সুদূর পাকিস্তান থেকে ডিপস্লুঅট গিয়ে আবাস গড়েছেন জামান। তার রয়েছে একটি বন্ধকের দোকান। সেই সাথে আছে একটি আসবাবের দোকান।
“দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা করা বেশ সহজ। এখানে টাকা কামাই করা বেশ সহজ। কিন্তু সব কিছু নির্ভর করে ব্যবসায় আপনি কিভাবে মন দিচ্ছেন তার উপর”।
দক্ষিণ আফ্রিকায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের অভিবাসন শুরু হয়েছে অনেক আগে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে যাওয়া শুরু হয়েছে সেই ঔপনিবেশিক আমলে।
সেসময় দাস হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেককে। আশেপােশের নানা দেশের মানুষজন তো রয়েছেই। সেখানে বর্নবাদী শাসনের অবসানের পর নতুন করে দক্ষিণ এশিয়া থেকে আবারো অনেকেই গেছেন। দেশটিতে কত অভিবাসীর বাস সে নিয়ে অবশ্য নানান মত আছে।
তবে দেশটির সরকার বলছে ২০ লাখের বেশি অভিবাসী দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস করেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন হলো দেশটিতে অভিবাসীদের উপর হামলার ঘটনা বাড়ছে।
২০০৮ সালে এরকম একটি আক্রমণের বর্ণনা করলেন ফুংগাই।
“এরকম হামলার শিকার আমি হয়েছি। আমার দোকানটি তখন আরো ছোট ছিলো। কয়েকজন লোক দোকানে ঢুকে আমার স্বামীকে মারধোর করে। ওর মাথা এমন ফুলে গিয়েছিলো যে আমাদের বাচ্চাটা ওকে চিনতে পারতো না। ভয়ে বাবাকে দেখলে দৌড় দিত”। জামান তাঁর পাঁজরের কাছে গুলির দাগ দেখালেন।
“২০১১ সালে আমার দোকানে চোর এসেছিলো। তারা এসে টাকা দাবী করলো আর আমার ওপর গুলি চালাতে শুরু করলো। এখানে অপরাধের প্রবণতা খুব বেশি”। অপরাধ প্রবণ দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ দুর্নাম রয়েছে।
জাতিসংঘের অপরাধ ও মাদকদ্রব্য বিষয়ক সংস্থার মতে সেখানে হত্যা ও ধর্ষনের মতো অপরাধের হার অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি।
কিন্তু নানা ধরনের হামলার পাশাপাশি ইদানিং ব্যবসাও ভাল যাচ্ছে না বলছেন ফুংগাই।
“আমি মিথ্যা বলতে চাইনা। ইদানিং ব্যবসা খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। কারন প্রতি সপ্তাহেই একবার করে মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়ছে”।
ফুংগাই তার ছেলেমেয়ের ছবি দেখাচ্ছিল। তাদের জিম্বাবুয়ে রেখে এসেছেন তিনি।
“ছেলে মেয়েদের থেকে দূরে থাকা খুব কষ্টের। কিন্তু আমি ওদের জন্য একটা ভাল জীবন চাই। আমি চাইনা ওরা রাস্তায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হোক। আমি চাই ওরা ভাল মানুষ হয়ে বড় হোক। সেজন্যেই তো এত পরিশ্রম করছি”।
ফুংগাই অবশ্য বলছেন অনেক হয়েছে। এবার দেশে ফিরে যেতে চান তিনি। বিবিসি