sliderরাজনীতিশিরোনাম

কেউ যেন ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ না পায়-প্রধানমন্ত্রী

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হওয়ার পরেও বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ সময় স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সে কারণে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি যেন আর কখনো ক্ষমতায় এসে ইতিহাস বিকৃতি ঘটাতে না পারে, সে জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে’র স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটাই অনুরোধ থাকবে আর যেন কখনো ওই পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, ওই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদলেহনকারী, তোষামোদি চাটুকারের দল যেন এই বাংলার মাটিতে আর কখনো ইতিহাস বিকৃতি করবার সুযোগ না যায়। তার জন্য সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে জাগ্রত হতে হবে।’
বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। এ সময় শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি সহমর্মিতাও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ স্বাধীন। এই স্বাধীনতা ২৩ বছরের সংগ্রাম এবং নয় মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছে। বাঙালি জাতি হিসেবে পাওয়া গেছে বিশ্বদরবারে মর্যাদা। আর এই মর্যাদা এনে দিয়েছেন মহান নেতা বঙ্গবন্ধু।
এ সময় ইউনেসকোর মহাসচিব এবং যেসব দেশ ৭ মার্চের ভাষণের পক্ষে ভোট দিয়েছে তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের কথা উল্লেখ করে সেদিনের কিছু স্মৃতিচারণা করেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, ভাষণের আগে তাঁর মা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন, তিনি যেন তাঁর মনের মতো ভাষণ দেন। কোনো লিখিত বক্তব্যের ওপর নির্ভর না করেন। ফজিলাতুন্নেসা বলেছিলেন, ‘তোমার মনে যেই কথা আসে শুধু সেই কথাই বলবে।’
মায়ের এই পরামর্শকে শ্রেষ্ঠ পরামর্শ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক ভাষণ দিয়েছেন, তা অনেক স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে সেগুলো ছিল লিখিত। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণের কোনো লিখিত বক্তব্য ছিল না, ছিল না কোনো নোট। ওই এক ভাষণেই তিনি সব দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। কারণ বঙ্গবন্ধু জানতেন কী ঘটতে পারে। এই ভাষণে তিনি বাংলাদেশের সব মানুষের ২৩ বছরের নিপীড়ন, অত্যাচার, শোষণের কথা বলেছিলেন। কী কী করণীয় তাঁর নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫-এর পর যারা ক্ষমতা দখল শুরু করেছিল, যারা এই মাটিতে জন্ম নেয়নি। তাই তারা বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না।
যারা একদিন এই ভাষণ বাজাতে বাধা দিয়েছে, নাম মুছতে বাধা দিয়েছে আজকে যখন ইউনেসকোর স্বীকৃতির কথা জেনেছে তখন তারা লজ্জা পেয়েছে কি না সেই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই দেশের মানুষ ২১ বছর স্বাধীনতার আসল ইতিহাস জানতে পারেনি, কী দুর্ভাগ্য। ‘বিজয়ী জাতি তাদের বিজয়ের ইতিহাস জানতে পারে না, এর থেকে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?’ যোগ করেন তিনি। বলেন, ইতিহাস এক সময় সত্যকে অবশ্যই তুলে ধরে।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ বলে এই নাগরিক সমাবেশ থেকে প্রতিজ্ঞা করেন প্রধানমন্ত্রী। উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে সূর্য আবার নতুন করে দেখা দিয়েছে। এই সূর্যই এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’ এনটিভি।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button