sliderঅর্থনৈতিক সংবাদশিরোনাম

কুমির চাষে সফলতা, রপ্তানি হচ্ছে কোটি টাকার চামড়া

২০০৪ সালে ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষের জন্য রেপটাইলস্ ফার্ম লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ ১৩ একর ৫৬ শতক জমি ক্রয় করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অনেকের মাঝে ঘটনাটি হাসি-তামাসা ও উপহাসের সম্মুখীন হতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের। কারো কথায় কোন পাত্তা না দিয়ে ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর ৭৪টি কুমির নিয়ে শুরু হয় খামারটির পথচলা।
মালয়েশিয়ার সারওয়াত থেকে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে আনা হয় ওই ৭৪টি কুমির। সেই রঙ্গরসের প্রতিষ্ঠানটি সফলতার মুখ দেখেছে খুব অল্প সময়ের মাঝেই। ৬ বছর পর ২০১০ সালে গবেষণার জন্য জার্মানির হাইডেলবার্গ নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬৯টি হিমায়িত কুমির এক কোটি টাকায় বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৩ সালের আক্টোবরে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে উপহার হিসেবে ৫টি কুমির দেওয়া হয়। এই খামার থেকে প্রতিবছর পায় ৩শত কুমিরের চামড়া রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে আড়াই হাজার কুমির রয়েছে এ খামারে। কুমিরের প্রজনন ও বাসযোগ্য করে খামারটি গড়ে তোলায় ঈর্ষণীয় সফলতার মুখ দেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
খামারের ব্যবস্থাপক ডা. আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ জানান, ফার্মে ৬-৭ বছর বয়সের একটি মা কুমির বছরে একবার (এপ্রিল-মে মাসে) ৬০ থেকে ৮০টি করে ডিম দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৭০ থেকে ৮০ দিন। প্রজনন মৌসুমে মা কুমিরের দেওয়া ডিম থেকে প্রতি বছর কৃত্রিম উপায়ে কুমিরের বাচ্চা উৎপাদন হয় এখানে। যেগুলোকে ধাপে ধাপে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে হ্যাচারিতে স্থানান্তর করা হয়। খামারের রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের সাথে কুমিরগুলোর তৈরি হয়েছে অন্য রকম এক সখ্যতা। বর্তমানে খামারে প্রায় ৫০টি পুকুর রয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানিযোগ্য কুমিরগুলো হ্যাচারি থেকে তুলে এনে আলাদা শেডে রাখা হয়। ছয় থেকে আট মাস সেখানে রেখে নানা প্রক্রিয়ার পর কুমির থেকে চামড়া আলাদা করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় তিন থেকে চারশ কুমিরের চামড়া রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। গত চার বছরে আমরা মোট ১২৫৬টি কুমিরের চামড়া রপ্তানি করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য ২০২১-২২সালে এখান থেকে প্রতি বছর এক হাজার কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা সম্ভব হবে। সরকারের অনুমতি পেলে দেশের ফাইভস্টার হোটেলে বিদেশি লোকের জন্য কুমিরের মাংস বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তাছাড়া কুমিরের দাঁত, হাড়সহ অন্যান্য অংশ বিদেশে রপ্তানি করারও পরিকল্পনা রয়েছে খামার কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয় লুৎফর রহমান রিপন জানান, অজোপাড়াগাঁয়ে এ প্রকল্পটি চালু হওয়াতে এলাকার প্রায় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম দিকে কুমির চাষের মত বিষয়টি এলাকার মানুষের কাছে হাস্যকর ব্যাপার ছিলো। কিন্তু বর্তমানে আমার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এ খামারটি ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় আমি গর্বিত।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেলাল আহম্মদ জানান, আমাদের কাছে কুমির খামারের লোকজন চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন সহযোগীতা চাইলে আমরা তা করে আসছি এবং ভবিষ্যতেও তা করে থাকবো।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button