শাহীন রাজা : “সত্য বলতে হবে, এজন্যই আপনারা সাংবাদিক। সাংবাদিকদের কারো পক্ষ নেওয়া উচিত নয়। মিথ্যা তথ্য বা বিভ্রান্তি ছড়ালেও সেগুলো স্থায়ী হয় না, মানুষ ঠিকই এক সময় সত্যটি জানতে পারবে ।” হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।
তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে, একথা বলেন। এটা বোধহয় বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জন্য খুব একটা সম্মানজনক উপদেশ নয়।
এদিকে বাংলাদেশের একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল-ও এব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেছে। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, নেতারা যেন ৭১ এবং সময় টিভি’র টক শো’তে অংশ না নেয়।
মীনাক্ষী’র বক্তব্য কিংবা বিএনপির সিদ্ধান্তে সাংবাদিকদের আত্মশ্লাঘায় আঘাত লাগতেই পারে।
সাংবাদিকরা কি দলীয় আচরন করছে ? সাম্প্রতিক বাস্তবতা হচ্ছে, সাংবাদিকদকরা, সাংবাদিক থাকছেন না ! সাংবাদিকতা ছেড়ে ক্রমশই বড় দলের কর্মী হয়ে উঠছে। হয়তো বাড়তি সুবিধা লাভের আশায় ! ক্রমশই বড় কোন রাজনৈতিক দলের মাইক হয়ে যাওয়া !
আগেও সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক ছিলেন। তা কখনওই দলীয় কর্মী পর্যায়ে নয়। এমনকি তাদের প্রতিবেদন বা লেখায়ও এর প্রতিফলন ঘটতো না। সাদা-কে সাদা। এবং কালা-কে কালা বলেই উল্লেখ করতেন। একারণে সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাস ও সম্মান দুটোই ছিল।
আজ থেকে বিশ বছর আগ পর্যন্ত ‘ইত্তেফাক ‘এর প্রতি অগাধ আস্থা ছিল। ছোট,বড় যে কোন ঘটনা ইত্তেফাকে ছাপা হলে তা পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো। এমনকি ইত্তেফাকের একজন মালিক এবং সম্পাদক, এরশাদের মন্ত্রী সভায় মন্ত্রী হওয়ার পরও পত্রিকার নিরপেক্ষতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। যেই দলীয় আচরন শুরু করলো, অমনি প্রচার সংখ্যা ভূমিতে ভূলুণ্ঠিত !
এমনকি সরকারি সংবাদপত্র ‘দৈনিক বাংলা’। সরকারি সংবাদপত্র হওয়া সত্ত্বেও, বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত কোন খবর ছাপা হতো না। সেই সময় ইংরেজি পত্রিকা, ‘অবজারভার’ এখনও সৎ পেশাদার সাংবাদিকতার উদাহরণ।
আমরা কি ক্রমশই পেছনের দিকে ধাবমান। না কি, সাংবাদিকতা পেশা’র তকমা গায়ে এটে রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে বিভিন্ন টিভিতে আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক আলোচনা। যা ‘টকশো’ নামে পরিচিত। বেশীরভাগ টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠিত টকশো’র অ্যাঙ্কর বা সঞ্চালকদের ভূমিকা দেখলে আমার তাই মনে হয়।