sliderউপমহাদেশশিরোনাম

কারফিউ জারির পরও অশান্ত মণিপুর

আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে ভারতের মণিপুর রাজ্য। রোববারও ওই রাজ্যের জিরিবাম জেলার জিরি নদী থেকে দু’টি মৃতদেহ উদ্ধারের খবর মিলেছে। মণিপুর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ষাটোর্ধ্ব এক বয়স্কা এবং বছর দুয়েকের এক শিশুর মুণ্ডহীন মৃতদেহ নদীতে ভেসে আসে। রোববার পর্যন্ত জিরিবাম জেলায় মোট ছয়টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হল। মেইতেইরা মনে করছেন, ওই ছয়টি মৃতদেহ জিরিবাম থেকে অপহৃত তিন মহিলা এবং তিন শিশুর। অবশ্য, অন্য একটি অংশের দাবি, নদীতে আরো কয়েকটি মৃতদেহ ভেসে আসতে দেখা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়বে।

গত সোমবার জিরিবামে আসাম সীমানা লাগোয়া অঞ্চল থেকে অপহরণ করা হয়েছিল ওই ছয়জনকে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল ওঠে কুকিদের দিকে। নদীতে মৃতদেহ উদ্ধারের পরেই মণিপুরের ইম্ফল-সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে মেইতেই জনগোষ্ঠীর সদস্যেরা।

প্রশাসনের তরফে জানা গেছে, শনিবার ওই রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী গোবিন্দদাস কন্ঠৌজাম, বিজেপি বিধায়ক ওয়াই রাধেশ্যাম, বিজেপি বিধায়ক পাওনাম ব্রজেন, কংগ্রেস বিধায়ক টিএইচ লোকশ্বরের বাড়িতে আগুন ধরানো হয়। ওই সময় মন্ত্রী, বিধায়ক এবং তাদের পরিবারেরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে বিক্ষোভকারীরা প্রথমে জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। ইম্ফল পূর্ব জেলার লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে হামলার অভিযোগও ওঠে।

হামলা হয় মণিপুরের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সাপম রঞ্জন, বিজেপি বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের জামাতা আরকে ইমোর বাড়িতেও। হামলাকারীদের দাবি, জিরিবাম জেলায় ছয়জনকে খুন করায় অভিযুক্ত যারা, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ইম্ফলে কারফিউ জারি করা হয়। ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, চূড়াচাঁদপুরসহ মোট সাত জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। নিরাপত্তাজনিত একাধিক বিধিনিষেধও জারি করা হয়। সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেল্‌সের জওয়ানদের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভ দমন করতে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনী। তবে তার পরও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি।

মণিপুরের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রে ভোটপ্রচারের কর্মসূচি বাতিল করে রোববার দিল্লি ফিরে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সরকারিভাবে কিছু জানানো না-হলেও একটি সূত্রের খবর, দিল্লি ফিরেই মণিপুর-পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকে মণিপুরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। সূত্র মারফত আরো জানা গিয়েছে, সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন শাহ।

ঘটনার সূত্রপাত কিছু দিন আগে। মণিপুরের জিরিবামে কুকি উগ্রবাদী এবং সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। অভিযোগ, ওই সময় একদল কুকি উগ্রবাদী মেইতেই সম্প্রদায়ের তিন মহিলা এবং তিন শিশুকে অপহরণ করে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ১০ কুকি উগ্রবাদী। যদিও কুকি সম্প্রদায়ের দাবি, নিহত ১০ জন ছিলেন ‘গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী’। জিরিবাম জেলা থেকে একই পরিবারের তিন মহিলা এবং তিন শিশুকে অপহরণের অভিযোগও উঠেছিল কুকি উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে। ওই ছয়জন ছিলেন মেইতেই সম্প্রদায়ের।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button