sliderবিনোদনশিরোনাম

কবি হেলাল হাফিজ আর নেই

দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ দুপুরে শাহবাগের সুপার হোম হোস্টেলে তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। জানা গেছে, দুপুর সোয়া ২টার দিকে সুপার হোস্টেলের বাথরুমের দরজা খুলে মৃত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হচ্ছে বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান তিনি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে কারণে মৃত্যু হয় তার। এছাড়াও হেলাল হাফিজ দীর্ঘদিন ধরে গ্লুকোমায় আক্রান্ত ছিলেন। পাশাপাশি কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস ও স্নায়ু জটিলতায় ভুগছিলেন।

প্রতিভাবান এই কবি ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান। ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক ‘পূর্বদেশে’ সাংবাদিকতায় যোগদান করেন।

১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য-সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক ‘দেশ’ পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।

কবিতায় অসামান্য অবদানের স্মারক হিসেবে হেলাল হাফিজকে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন- যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা।

কবি হেলাল হাফিজের লেখালেখির সূচনা ঘটে ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। সাংবাদিকতা করার দরুণ কবি ওই সময়ের উত্তাল পরিবেশের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পেরেছিলেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ লেখার ঠিক ২৬ বছর পর ২০১২ সালে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ লিখেন। বহুল প্রতিক্ষীত সেই ‘কবিতা একাত্তর’ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।

স্বল্পপ্রজ এই কবি বিশের দশকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার কবিতার ভাষা সঠিক সময়ে সঠিক শব্দকে ধারণ করায় সময়ের প্রাসঙ্গিক কবি বলেই পরিচিত। তাছাড়া প্রেম ও দ্রোহের কবি হিসেবেও তিনি জনপ্রিয়।

পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ। আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’। তৃতীয় এবং সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button