sliderস্থানীয়

কটিয়াদীতে ধান ক্ষেতে মাজরা পোকা, দিশাহারা কৃষক

রতন ঘোষ,কটিয়াদী প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে আমন ধান খেতে মাজরা পোকা, পচন রোগ ও
ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে, ফলন নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা। কৃষকরা বলছে ধান ক্ষেতে বিভিন্ন রোগবালাই
কারণে ৪-৫ বার কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে তার পরেও মাজার পোকা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। স্বাস্থ্য
বিশেষজ্ঞরা বলছে, জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার কারণে মানবদেহে বিভিন্ন রোগ বেদী বেড়ে
যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৩ হাজার ৯৫
হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টির কারণে মাজরা
পোকা ও পচন রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোন, সরাসরি ও
উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বেশিরভাগ আমন খেতে মাজরা পোকার ব্যাপক আক্রমণ হয়েছে। ফসলের
মাঠজুড়ে এখন শুধু পোকার রাজত্ব। এদের হাত থেকে ফসল রক্ষায় বাজারে পাওয়া কীটনাশক স্প্রে করেও
কোনো কাজ হচ্ছে না। সময়মতো পোকা দমন করতে না পারলে এবার রোপা আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে।
এছাড়া গোড়া পচন রোগও আছে। ধানগাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করছে।

অন্যদিকে, চাষিরা ইঁদুরের উপদ্রব থেকে ধান রক্ষা করতে খেতের মধ্যে বাঁশের কঞ্চি গেড়ে তাতে পলিথিন
টাঙিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার জমির চারপাশে ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন।
একাধিকবার কীটনাশক ছিটিয়েও পোকা দমন না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। কয়েক দফা
বালাইনাশক স্প্রে করার ফলে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এর ফলে ধানের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।
চারিপাড়া গ্রামেন কৃষক মো. মহসিন বলেন, এখনো ধানের গাছে থোর পর্যায়ে এসেছে। প্রতিবছর তিনবার
বালাইনাশক ছিটালে আর দরকার হয় না। এবার এখনো ধানের শিষ বের না হলেও আর এর মধ্যেই তিনবার
কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে। আরো কতবার স্প্রে করতে হবে তা জানা নেই।

মসূয়া গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া বলেন আমনখেতে মাজরা পোকার আক্রমণের পাশাপাশি খোল পঁচা রোগ ও
ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি কীটনাশক প্রয়োগ করেছি। তবে আমন খেতে পুরোপুরি
পোকামুক্ত হয়নি। গোড়া রোগের পঁচা বিনাশে কীটনাশকের কার্যকারিতা খুবই কম।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণ ও কৃষক ধান খেতে সঠিক
সময়ে নিয়ম মতো কীটনাশক ব্যবহার না করায় পোকার আক্রমণ হচ্ছে। পোকা দমনে কৃষককে অনুমোদিত
কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম ভুইঞা জানান, উপজেলায় এবার ১৩ হাজার ৯৫
হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়েছে। প্রতিবছরই মাজরা পোকার আক্রমণ হয়। আবহাওয়া জনিত
কারণে এ বছর মাজরা পোকার আক্রমটা একটু বেশি তবে কৃষকেরা সঠিকভাবে সঠিক সময়ে কীটনাশক
ব্যবহার করলে পোকা দমন ও গোড়া পচন রোধ করা সম্ভব। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী যে কৃষক জমিতে
কীটনাশক ব্যবহার করেছে তাদের জমিতে পোকার আক্রমণ এবং পচন রোগ কম। এবং যারা বাজার থেকে
কীটনাশকের দোকানতে তাদের পরামর্শে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করছে তাদের জমিতে পোকা ও পচন
রোগের আক্রমন বেশি। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ঈশা খান জানান, অতিমাত্রায়
রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন কৃষিজ ও প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে কীটনাশক মানবদেহে
প্রবেশ করায় মানুষের হার্ট, কিডনি, লিভার, স্নায়ু ও ত্বক আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা
করে জমির উর্বরতা ও পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা আবশ্যক।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button