sliderস্থানীয়

কটিয়াদীতে বসেছে ৫শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট

রতন ঘোষ, কটিয়াদী প্রতিনিধি:কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বসেছে পাঁচশত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট। হাট জুড়ে চোখে পড়বে অন্যরকম বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। এ হাটে বাদকরা বাদক যন্ত্র বাজিয়ে নেচে-গেয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন। এটি দেশের একমাত্র বাদ্যযন্ত্রের হাট। সনাতন ধর্মালম্বীদের শারদীয়া দুর্গাপূজা ঘিরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকের হাট। বাঙালির উৎসবে বাদ্যযন্ত্রের কোন জুড়ি নেই । তাছাড়া ঢাক ডোল ব্যতীত দুর্গোৎসব ভাবাই যায় না।বিশেষ করে সনাতন হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দুর্গাপূজাতে ঢাক অত্যাবশ্যক। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে প্রতিটি মণ্ডপে মন্ডপে, নাচ গান আরতি, আর দেবীর বন্দনা দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। তাই বাহারি রং আর বিভিন্ন আকারের,ঢাক-ঢোল বাঁশি- কাশি সহ অসংখ্য বাদ্যযন্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ৫০০ বছরের পুরনো দেশের একমাত্র বাদ্যযন্ত্রের হাট সনাতন ধর্মালম্বীদের দিচ্ছে বাড়তি আনন্দ।

মজার বিষয় হচ্ছ, এ হাটে কোন বাদ্যযন্ত্র বিক্রি হয় না । বিক্রি হন শুধু বাদ্যযন্ত্র সহ বাদকরা। যন্ত্রীসহ পছন্দের বাদ্যটি ভাড়া হয় এ হাটে। পূজা শুরু হওয়ার আগে দরদাম ঠিক করে বায়নার টাকা দিয়ে বাদ্যযন্ত্রসহ বাদকদের সঙ্গে করে নিয়ে যান পূজার আয়োজকরা। বাদকরা জানান এবার হাটে ভাল বিক্রি হচ্ছে দাম ও ভালো। একজন ঢাকি ১২/১৫ হাজার টাকা, বাঁশি বাদক ৫/৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৫/৬ জনের ব্যান্ড দল ২০/২৫ হাজার টাকা এবং ৮/১০ জনের বড় দল ৭০হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

প্রায় পাঁচশত বছর ধরে কটিয়াদীতে বসছে এই ঢাকের হাট।জনস্রুতি আছে যে, সুরস শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রাজা নব রঙ্গ রায় চৌধুরী কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার চারিপাড়া তার রাজপ্রসাদে প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। রাজবাড়ীর পূজায় ঢাক ঢোল বাশি সহ বিভিন্ন যন্ত্র সহ অংশ নিতে খবর পাঠানো হয় বিক্রমপুর পরগনার বাদকদের কাছে। সে সময় বিক্রমপুর থেকে আসা যন্ত্রীরা পূজার দুই দিন আগে কটিয়াদী -মটখোলা সড়কের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে জমায়েত হতেন। সেই থেকে প্রতিবছর ওখানে বসে যন্ত্র ও বাঁদকের হাট । পরে এই হাট স্থানান্তরিত হয়ে কটিয়াদী পুরাতন বাজার মাছ মহল সংলগ্ন এলাকায় এবং কটিয়াদী প্রেস ক্লাবের সামনে। ঢাকের এই হাটটি যদি বৃহস্পতিবার হাটবার দিন হয় তবে পার্শ্ববর্তী প্রয়াত স্বর্গীয় রামদয়াল ঘোষের কালী মন্দিরের সম্মুখে ও পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মী নারায়ণজির আখড়ায় বসেএই হাট। এ হাট থেকে টাংগাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, হবিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এখানে সনাতন ধর্মালম্বী লোকজন শারদীয় দুর্গাপূজার ঢাকডোল বাদকসহ নিয়ে থাকেন।

কটিয়াদী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ;/সম্পাদক জানান ঢাক ঢোলের এ হাট উপলক্ষে কটিয়াদী বাজার এলাকায় শত শত মানুষের সমাগম ঘটে । হাটের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। এখানে ক্রেতা বিক্রেতার নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন স্থানীয় প্রশাসন। কিশোরগঞ্জ – ২ (কটিয়াদী পাকুন্দিয়া) নির্বাচনী এলাকার জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব নুর মোহাম্মদ কটিয়াদী উপজেলার চল্লিশটি পূজা মন্ডপে তার ব্যক্তিগত সহকারি জাহাঙ্গীর আকবর শাকিল এর মাধ্যমে পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের হাতে তার অনুদান পৌঁছে দেন

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button