slider

কটিয়াদীতে গণহত্যা দিবস, অযত্নে বধ্য ভূমির স্মৃতিস্তম্ভ

রতন ঘোষ, কটিয়াদী প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে আজ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সনের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী উপজেলায় প্রথম হানা দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ১১ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। জ্বালিয়ে দেয় বহু ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। এই শহীদদের স্মরণে কটিয়াদী আড়িঁয়ল খাঁ নাদের তীরে, কটিয়াদী সরকারি পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সম্মুখ সংলগ্ন বৈদ্য ভুমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হলেও অযত্ন আর অবহেলায় সেটিও প্রায় জরা জীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং ঐদিনের অনেক শহীদের নাম উক্ত স্মৃতিস্তম্ভে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সেদিন দুপুরের পর থেকেই হানাদার বাহিনী কটিয়াদীতে নারকীয় হত্যা যোগ্য শুরু করে। সেদিন হানাদার বাহিনীর ভয়ে নিহতদের আত্মীয়-স্বজন তাদের লাশগুলো পর্যন্ত দাফন ও সৎকার করতে পারেনি । পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কটিয়াদীতে হত্যাযজ্ঞ শুরু করার কিছুদিন পূর্বে কটিয়াদী পুরাতন বাজারস্ত বীণাপানি মেডিকেল হলে তৎকালীন কটিয়াদী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান প্রয়াত মুক্তার উদ্দিন মিয়া, তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তা বর্তমানে প্রয়াত আব্দুর রউফ মন্ডল (টিআই মন্ডল), ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তৎকালীন সদস্য, বর্তমানে বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রতন ঘোষ, তৎকালীন থানা ছাত্র লীগের সভাপতি পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বর্তমানে প্রয়াত আব্দুর রশিদ কমান্ডার, থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে প্রয়াত ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, কটিয়াদি পুরাতন বাজারের বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী পরবর্তীতে কটিয়াদী বাজার বণিক সমিতির সদস্য বর্তমানে প্রয়াত শহীদুল্লাহ মিয়া (সুরুজ) সহ অনেকেই উপস্থিত থেকে রতন ঘোষের নেতৃত্বে কটিয়াদী পশ্চিম পাড়ার দিলীপ কুমার সাহা সহ তৎকালীন কালিয়াচাপরা সুগার মিলের কটিয়াদী থানা পরিদর্শক জনাব বাদল মিয়ার সহযোগিতায় সুগার মিলের জিপ গাড়িটি মাইক সহ কটিয়াদীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনের প্রচারে সহায়তা করেন।সেই সময় বীণাপানি মেডিকেল হল ও শহীদুল্লাহ মিয়ার (সুরুজ), কাপড়ের দোকানে স্বাধীন বাংলার পতাকা তৈরি ও বিক্রয় করার কারণে বীণাপাণি মেডিকেল হল সহ অনেক দোকানপাট হানাদার বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং শহিদুল্লাহ মিয়ার (সুরুজ) কাপড়ের দোকান সহ অনেক দোকানপাট লুটেরার দল লুটপাট করে। ঘটনার সময় বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ইপিআর) পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন, শেখ হারুনুর রশিদ তৎকালীন কটিয়াদী থানার ওসি মাজহারুল হক কে লুটপাট প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলাতে ওসি ক্ষেপে গিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। যার ফলে পরদিন ২৫ এপ্রিল ভোর বেলায় শেখ হারুনুর রশিদ ও আব্দুর রশিদ (তারা) মাস্টারের নেতৃত্বে উল্লেখিত ছাত্রলীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, ছাত্রলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাশিদ কমান্ডার, রতন ঘোষ সহ স্বাধীনতাকামি অনেকেই কটিয়াদী থানা আক্রমণে সহযোগিতা করে কটিয়াদী থানার অস্ত্রাগার থেকে থ্রি নট থ্রি রাইফেল সহ অন্যান্য জিনিস লুট করে ২মাইল দূরে আড়িয়ঁল খাঁ নদের অপর পাড় চরমান্দালিয়া গ্রামে নিরাপদ স্থানে রাখা হয় এবং অস্ত্রাগার লুটের সময় তৎকালীন ও সি মাজারুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর থেকেই শুরু হয় কটিয়াদী উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে হানাদার বাহিনীর আক্রমণ। উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা জমির উদ্দিন বলেন, “বৈদ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে বাদ পড়া শহীদদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা সহ সরকারের নিকট বৈদ্যভূমি গুলির রক্ষণাবেক্ষণের জোর দাবি জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বৈধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভের জায়গাটি, কটিয়াদী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের হওয়ায়, তারা বৈদ্যভূমির উন্নয়নমূলক কাজ করতে বাধা দিচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে বৈদ্য ভূমির উন্নয়ন করা যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button