রতন ঘোষ,কটিয়াদী প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে কটিয়াদী ও বাজিতপুর জনপদের বিখ্যাত শিবনাথ সাহার তালুকদার বা জমিদার বাড়ি। বাড়িটি বিভিন্ন ধরনের নকশা করা কারুকাজে ভরা ছিল। কালের বিবর্তনে সেসব এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেটুকু টিকে আছে তার মধ্যে রয়েছে বাড়ির সামনের দিকে একটি বড় রাজঘাট, শ্মশানঘাট ও মঠ। এগুলোও কালের বিবর্তনে কিছুটা সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, শিবনাথ সাহা এই বাড়িতে বসেই তার জমিদারি কাজ চালাতেন। তবে বাংলার অন্য জমিদারদের মতো তিনি অত্যাচারী ছিলেন না। প্রজাদেরকে তিনি ভালোবাসতেন, সুনজরে দেখতেন। তিনি ছিলেন উদার মনের মানুষ। বাংলা ১২৫৫ সালের ১৭ আষাঢ় ও ইংরাজি ১ জুলাই ১৮১৮ সালে উপজেলার কুড়িখাই গ্রামের একটি সনাতন পরিবারে শিবনাথ সাহার জন্ম। তার বাবার নাম কার্তিক চন্দ্র সাহা। দাদার নাম যাত্রাবর সাহা। শিবনাথ সাহার ছোট একটি ভাইও ছিলেন। নাম ছিল তার শম্ভুনাথ সাহা। শিবনাথ সাহার বাবার ও ঠাকুরদার আমলে তাদের জমিদারির অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তবে শিবনাথ সাহা জমিদারির দায়িত্ব পাওয়ার পর অর্থনৈতিক অবস্থার প্রসার ঘটে। তিনি বাজিতপুরের আলিয়াবাদে এক বনেদি সাহা পরিবারের মেয়ে কালী সুন্দরীকে বিয়ে করেন। কালী সুন্দরীও ছিলেন বেশ প্রজাবৎসল। তাদের ঘরে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় তিনি তার ভাই শম্ভুনাথ সাহার চতুর্থ ছেলে সুরেন্দ্রনাথ সাহাকে দত্তক নিয়েছিলেন।
বাবু শিবনাথ সাহা অনেক জনহিতকর কাজ করে গেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাজিতপুরে তার স্ত্রীর নামে কালিতারা পাঠশালা, বনগ্রামের তার বাবার নামে কার্তিক চন্দ্র সাহা লাইব্রেরি, ধুলদিয়ায় শিবনগর, কামালপুরে পূজামণ্ডপ এবং গোবিন্দপুর উচ্চবিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে ১৯১৮ এই বিদ্যালয়টি সরারচর শিবনাথ উচ্চবিদ্যালয় নাম ধারণ করে।
লোকমুখে প্রচলিত আছে, ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত গোবিন্দপুর জুনিয়র হাই স্কুলকে উচ্চবিদ্যালয়ের রূপ দিতে শিবনাথ সাহাকে অনুরোধ করা হলে তিনি রাজি হন। ওই সময় রাম নারায়ণ সাহা নামে এক দানবীর নাম মাত্র মূল্যে স্কুলের জায়গাটি দান করেন। স্কুলের দক্ষিণ পাশের জোড়া মঠটি রাম নারায়ণ সাহা ও তার স্ত্রী দুর্গা রানী সাহার স্মৃতি ধারণ করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
শিক্ষানুরাগী শিবনাথ সাহা বাংলা ১৩৩১ সনের ১৭ আষাঢ় (ইংরেজি ১৯২৪ সালের ১ জুলাই) ৭৬ বছর বয়সে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। বাড়ির পাশে নদীর পাড়ে শিবসাহা শশ্মশানঘাট নামে পরিচিত ঘাটটি তার এবং স্ত্রীর কালী সুন্দরীর স্মৃতিবিজড়িত মঠ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরবর্তীকালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর এই শিক্ষানুরাগীর উত্তরসূরীরা এখন পর্যন্ত কটিয়াদীতেই বসবাস করছেন এবং বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।