sliderস্থানীয়

কটিয়াদীতে পাটের বাজারে ধস, লোকসানে চাষিরা

রতন ঘোষ,কটিয়াদী প্রতিনিধি :কথায় আছে আশায় বাঁচে চাষা। কোনও বছর পাট চাষ করে কিছুটা লাভ হয়, কোনও বছর আবার পাট চাষের খরচই ওঠে না। তবুও বছর বছর পাট চাষ করেন কৃষকেরা। গত বছর পাটের ফলনের পাশাপাশি দামও ভালো ছিল। কিন্তু এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনিতেই ফলন কম, তার উপরে বাজারে পাটের দরপতন চলছে। এরই মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে প্রতি মণ পাটের দাম কমেছে চারশ’ থেকে ছয়শ’ টাকা। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন উপজেলার পাটচাষিরা। চাষিরা জানান, গত বছরেও এই সময়ে প্রতি মণ পাট দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি করা গেছে। মাসখানেক আগে নতুন পাট ওঠা শুরু হলে কৃষকের দুই হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেন। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে পাটের দাম কমতে কমতে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায় নেমে গেছে। এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে পাট আবাদে ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতে প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ দুই হাজার ৩০০ টাকারও বেশি পড়েছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় এবার পাটের মান ও উৎপাদন দুটোই কমেছে। যা-ও উৎপাদন হয়েছে, বর্তমান বাজার দরে খরচ ওঠা দূরের কথা, লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের কাছে এখনো গত বছরের প্রায় ৩০ হাজার মণ পাট মজুত রয়ে গেছে। ফলে তারা কম কিনছেন। এ ছাড়া বাজারে পাটের সরবরাহ বাড়ায়, পাট রপ্তানিকারক ও বেসরকারি পাটকলগুলো পর্যাপ্ত পাট না কেনায় পাটের বাজার অস্থিতিশীল। এক্ষেত্রে পাটের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সহযোগিতা চান কৃষক- ব্যবসায়ী উভয়ই।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এক হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে এক হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। সে হিসেবে গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে ৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ কমেছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিক অমিল, সেচ খরচ বৃদ্ধি, জাগ দেওয়া পানির অভাব এবং ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা দিন দিন পাট চাষে আগ্রাহ হারিয়ে ফেলছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন পাটের মোকাম কটিয়াদীর পৌর সদরে। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষি ও ফড়িয়ারা পাট বিক্রির জন্য মোকামে নিয়ে আসছেন। বেশির ভাগ পাটই বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকার নিচে।
পাট ব্যবসায়ী জুয়েল সাহা জানান, মঙ্গলবার ভালো মানের প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা এবং এবং নিম্ন ও মধ্যম মানের পাট এক হাজার 2০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা ।
পাটচাষি উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের নোয়াকান্দি গ্রামের কৃষক বকুল মিয়া বলেন, প্রতি বছরই কম-বেশি জমিতে পাট চাষ করি। কয়েক বছরের তুলনায় এ বছরই পাটের দাম অনেক কম। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পাট চাষের খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। এ মৌসুমে এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করে সাড়ে সাত মণ পাট পেয়েছি। সেই পাট দুই হাজার ১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। এ দরে পাট বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর সিলিন্ডার গ্যাসের যুগে গ্রামঞ্চলে জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠির নির্ভরতাও এখন কমে যাচ্ছে। তাই আগামীতে পাট চাষ না করার কথা ভাবছি।
কটিয়াদী পাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবীর সাহা বলেন, সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বাড়ায় পাটের চাহিদা এখন অনেকটাই কমে গেছে। একসময় সরকারি ক্রয় কেন্দ্র ছিল, এখন নেই । সরকারিভাবে পাট ক্রয় করা হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকত। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষক বাঁচাতে আগের মতো সরকারি পাট ক্রয় কেন্দ্র চালু ও পরিবেশ বান্ধব পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button