
ভারতের রাজধানী থেকে থেকে ছবছর আগে হারিয়ে যাওয়া একটি বাচ্চা ছেলে সোনু আজ বাংলাদেশ থেকে আবার দিল্লিতে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে এসেছে।
বাবা-মার সঙ্গে তার ডিএনএ পরীক্ষার ফল মিলে যাওয়ার পর বাংলাদেশের একটি আদালতের নির্দেশে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস আজ সোনুর ভারতে ফেরার ব্যবস্থা করে।
দিল্লিতে সোনুকে জড়িয়ে ধরে আজ তাকে দেশে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তার অফিসে ছোট্ট সোনুকে জড়িয়ে ধরে সুষমা স্বরাজ টুইট করেছেন ‘ওয়েলকাম হোম সোনু’।
আর বহুকাল পরে কোলের ছেলেকে ফিরে পেয়ে সোনুর মা মমতাজ বেগম বলছেন, বাংলাদেশের জামাল ইবনে মুসা না থাকলে এই দিনটা তার জীবনে কখনও আসতই না।
“আমাদের সবচেয়ে বড় ঈদ আজকে। এর চেয়ে বড় খুশি তো কিছু নাই, আমার ঈদের চাঁদ হল সোনু। আর এখানে আমি না-বলে পারছি না জামালভাই আমাকে সাহায্য না-করলে আমার ছেলেকে কোনও দিন আমি পেতাম না। উনি আমার জন্য সব কিছু – আমার খোদা ভি উনি, ভগবান ভি উনি!”
জামাল ইবনে মুসাই মাসকয়েক আগে দিল্লিতে এসে সামান্য তথ্যের ওপর ভর করে সোনুর বাবা-মাকে খুঁজে বের করেন।
গত এক বছরের মধ্যে পাকিস্তান থেকে মূক-বধির গীতা কিংবা জার্মানি থেকে গুরপ্রীত কাউরের মতো অনেক অসহায় ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তার মন্ত্রণালয় বলছে, এই তালিকাতেই সবশেষ সংযোজন সোনু।
দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাবা-মার সাথে
সোনু দিল্লি থেকে কীভাবে বাংলাদেশে?
সোনুকে নিয়ে দিল্লিতে বহু আবেগ উচ্ছাস প্রকাশ করা হলেও, ছবছর আগে বাড়ি থেকে কীভাবে সে উধাও হয়ে বাংলাদেশে গিয়ে ঠেকে-সে রহস্য এখনো কাটেনি।
মমতাজ বেগম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তার ওপর প্রতিহিংসাবশত রহিমা বেগম নামে এক বাংলাদেশী তার ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল।
‘ওই বাংলাদেশী মহিলাকে আমি বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলাম। একটা ছোট মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে ছিল, খেতে পেত না – তাই ওকে বাড়িতে থাকতে দিই। কিন্তু পরে আমার স্বামীর সঙ্গে ওর এমন একটা ব্যাপার ধরা পড়ে যায়, যেটা দেখে আমি ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিই। মারধরও খুব হয়।’
‘এর ঠিক এক সপ্তাহ পর সোনুকে আমার বাড়ি থেকে উঠিয়ে নেয় ওরা। আমরা কিন্তু প্রথমে ঘুণাক্ষরেও বুঝিনি ও-ই আমার সোনুকে উঠিয়ে নিয়েছে। আর আমি নিজে চোখে যখন দেখিনি, তখন অযথা সন্দেহই বা কেন করব? থানায় আমরা ছেলে নিখোঁজ বলে রিপোর্ট লেখাই। এদিক-ওদিক খুঁজতে শুরু করি।’
সোনুর বাবা মেহবুবই রহিমার হাতে সোনুকে তুলে দেন বলে বাংলাদেশে রহিমা বেগম অবশ্য দাবি করেছেন। এই ব্যাপারে মেহবুব নিজে মুখে কুলুপ এঁটেছেন, তবে তার স্ত্রী বলছেন এত বছর ধরে সোনুকে খুঁজতে তারা চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি।
‘রহিমার বোনদের সঙ্গেও আমার আলাপ ছিল, যদিও জানতাম না ওরা আসলে বাংলাদেশের। ওদেরকেও ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, জানো না কি রহিমা আমার ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে কি না? কিন্তু ওরা প্রথমে বলল না, না সে প্রশ্নই ওঠে না।’
সুত্র: বিবিসি